আমার বড় দাদার সাথে টেক্সটাইল মিলে তাঁতের কাজ শিখে কাজ করছিলাম৷ সময়টা ছিল ১৯৮৪ ইংরাজী৷ কিছুদিন কাজ করার পর রাত জাগা কাজ আর ভালো লাগছিলনা। বড় দাদাকে বললাম, বড় দাদা বিষয়টি মাথায় রেখে মিলের ম্যানেজারের সাথে আলাপ আলোচনা করে আমাকে রিচিং (ড্রয়ারম্যান) এর কাজ দেয়৷ এই কাজে রাতের কোন ডিউটি নেই শুধুই দিনের কাজ৷ তখন আমারা নারায়ণগঞ্জের নন্দিপাড়ায় বাসাভাড়া করে থাকতাম আমরা সবাই৷ সংসারে ছয়’জন সদস্য আমরা৷ সংসার চলাতেন বড় দাদা, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার বেতন পেতাম, বেতন পেয়ে অল্পকিছু টাকা নিজের কাছে রেখে বাকী টাকা বড় দাদার কাছে বুঝিয়ে দিতাম৷ বেতন পেতাম সপ্তাহ ৩৫০-৪০০টাকা৷ তখনকার সময় আমার দুইতিন’জন বন্ধু ছিল খুবই কাছের৷ বন্ধু দু’জনের মুদি ব্যবসা, মিলের কাজ শেষে করে আগে ওদের সাথে দেখা করে বাসায় যেতাম৷ এমনভাবে চলতে চলতে দূর্গাপূজা সমাগত, কদিন পরেই শুরু হবে দূর্গোৎসব৷ বন্ধুদের সাথে কথা হলো পূজায় একা কোথাও যেতে পারবোনা, তাদের সাথে থাকতে হবে৷ আর কি করা, থাকতে তো হবেই, না থাকার উপায় নাই৷ দূর্গোৎসব শুরু হয়ে তিনদিন অতিবাহিত হলো। রাত পোহালেই বিজয়া দশমীর প্রস্তুতি৷ বিজয়া দশমীর দিন বিকালবেলা ঢাকঢোলের বাদ্যে মুখরিত চারদিক, বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ আর যুবক যুবতীদের নাচের সাথে যেন আমার মা দূর্গোতীনাশিনীও নাচতে লাগল৷ আর মা দূর্গোতীনাশিনীর নাচ হলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত লাইট দ্বারা, হরেকরকম লাইট জ্বলছে নিবছে। এর কারণে দেখা যায় প্রতিটি মূর্তিই যেন বাদ্যযন্ত্রে আওয়াজের সাথে সাথে নাচছে৷ বন্ধুদের দিকে খেয়ল করলাম, তারাও নাচছে, তবে কারো হুঁশ বলতে কিছু নেই৷ তারা সবাই বেহুঁশ৷ ওদের কাছে আমার আগে থেকে নিষধ ছিল যে, আমি তোদের সাথে থাকবো ঠিক, তবে বেহুঁশ হবোনা, আর বেহুঁশ হওয়ার জন্য কোন অনুরোধও চলবেনা৷ আর এরকম বেহুঁশ ঈদে, বড়দিনে, বৌদ্যপূর্ণিমা সহ সব ধর্মাবলম্বীদের বড় বড় উৎসবের উৎসাহে হয়ে থাকে অহরহ৷ আর এই বেহুঁশ হলো কী দিয়ে সেটাও বলে দেই, (মদ্যপান)৷ যারা জীবনে মদ্যপান করেনাই এই প্রথম করলো, তারা এই প্রথম মাদকের উপর হাত রাখলো৷ যাক সেসব কথা,তবে বেহুঁশের কারণটা মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে অনবরত৷ আর ভাবছিলাম ওদের সাথে চললে আমার বিপদ আসন্ন৷ তারপর বিজয়া’দশমীর পরদিন থেকে আর তাদের সাথে দেখা বা কথা বলা থেকেও বিরত থাকলাম দীর্ঘদিন৷ টেক্সটাইল মিলে কাজ করি একটা হেলপার নিয়ে, বেতন দিতে হয়না, শুধু কাজ শেখানোর কথা৷ কাজ শেখার পর ওর মা-বাবার সাথে আলাপ আলোচনা করে বেতন দেওয়া হবে৷ মাসখানেক পরই বেতন ধরলাম মাসে ১০০/=টাকা৷ ছেলেটা মহাখুশি, তারপর দু’তিন মাস যাওয়ার পর একদিন দেখি ছেলেটা ওর দু’জন বন্ধুর সাথে ধূমপান করছে! আমি দেখলাম, ভাবলাম, একপ্রকার চিন্তায়ও পরলাম৷ চিন্তা করতে লাগলাম এই ১০-১২বছরের ছেলেটা আজ সিগারেট জাতীয় নেশায় আসক্ত? ক’দিন পরে কী হবে? এসব চিন্তার আবির্ভাব ঘটে ছেলেটাকে যখন প্রাতঃকালে ডিউটির ঠিক আগমুহূর্তে দেখি তখন৷ কদিনপরে আর জিজ্ঞেস না করে পারলামনা৷ প্রশ্ন করলাম তোকে সেদিন দেখলাম সিগারেট টানতে! তোর আরো দু’জন বন্ধু সাথে ছিল, ওরা কারা? জবাবে বললো কইনাতো ওস্তাদ, এইডা আবার কী কন ওস্তাদ৷ আমনে আমারে দেহেন নাই, কারে না কারে দেখকা অহনে আমারে কইতাছেন৷ আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, আমারওতো ভুল হতে পারে৷ কয়েক মাস পর ও আমার কাজ ছেড়ে দিয়ে মটর মেকারের কাজ নেয়৷ আমি ছেলেটার খবর নেই মাঝেমাঝে৷ ওর বাবা দিন’মজুরের কাজ করে৷ ছেলেটা পাঁচ ভাই’বোনদের মধ্যে সবার ছোট, বছরদুয়েক পর জানতে পারলাম ছলেটা এখন গাঁজাও সেবন করে অহরহ৷ শুনে খুব কষ্ট পেলাম, দুঃখ পেলাম৷ তারপর কেটে গেল অনেক বছর, কোন একসময় বিয়েও করে ফেললো ছলেটা৷ দুই সন্তানের পিতা, কোন কাজ করেনা, স্ত্রীর রোজগারের উপর নির্ভর৷ দংশহোক আমাদের সমাজ থেকে দেশ থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা৷মুক্তি পাক আমাদের যুবসমাজ৷ একদিন আমি রাস্তাদিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম হটাৎ কানে শব্দতরঙ্গ বেজে উটল৷ ওস্তাদ ও ওস্তাদ শনেন, আমি তাকালাম ওরদিকে,দেখি ছেলেটা রাস্তার পার্শ্বে ড্রেনের মধ্যে দাঁড়ানো, আমি চুপকরে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম৷ ও আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো আরে ওস্তাদ এখনতো চিনতেননা, আমি ওমুকে চিনছেন? আমি বললাম উঠে সামনে আসো৷ সামনে আসলো, দেখলাম দুইপায়ে আর দুহাতে ময়লায় একাকার৷ জানতে চাইলাম এই অবস্থা কেন? সরল ভাবে জবাব দিল ছেলেটা, বললো নেশায় শেষ হইয়া গেছি ওস্তাদ৷ ছেলটার কথা শুনে আমার কান্না আসতে লাগল৷ আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম ছেলেটাকে৷ জিজ্ঞেস করলাম ড্রেনের মধ্য কী কাজ? ছেলেটা বলল আরে ওস্তাদ এই ড্রেনের মধ্যে অনেক জিনিস পাওয়া যায়৷ হারাদিন ড্রেনেরতুনে লোয়ালংকর বিচরাইয়া ভাংগারু দোকানে লইয়া যাই৷ তারপর এই গুলো বেচ্চা নিজের খরচ চালাই৷ নিজের লাগে এক দেরশ টাকা৷এই এক দেরশ টাকা ওর নিজের’ই লাগে৷ অনেকক্ষণ পর বললাম, তোমার বাবা-মা বেঁচে আছে? উত্তর দিল না৷ একটু নীরবতা অবলম্বন করে বললাম হাত পা ধুয়ে আসো,তারপর শুনবো সবকথা৷ হাত পা ধুয়ে আসার পর নিকটবর্তী এক চা দোকানে নিয়ে গেলাম ছলেটাকে৷ জানতে চাইলাম বিয়ে করেছ? জবাবে বলল হ্যাঁ ওস্তাদ করছি, তয় বউ সুবিধার না৷ বললাম কেন? ও বলল আরে ওস্তাদ চাকরি করেতো আমারে দামদেয়না বুঝলেন, আবার নেশপানি করিতো ইল্যাইগা,বুঝেনাই ওস্তাদ৷ আবার কয় মইরা’যা তুই মইরা’যা৷ জানতে চাইলাম ছেলে পেলে কতজন, বললো দুইজন, একছেলে একমেয়ে, আরে ওস্তাদ ঘরের হগল্তে চায় আমি মইরা যাইনা কে৷ আমি আর ওর কথা শুনতে চাইলামনা, নিজের কাছে খারাপ লাগছিলো৷ আমি একশত টাকা ওর হাতে দিয়ে ওর কাছথেকে বিদায় নিলাম,বললাম পরে দেখা হবে৷ ও জিজ্ঞেস করছিলো অহন কী কাজ করেন ওস্তাদ! শুধু বললাম পরে বলবো, এখন যাই৷ হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলাম, সেদিনের একটা তরতাজা একটা ছেলে আজ নেশার কারণে আজ সকলের ঘৃণার পাত্র৷ পরিবারের সবাই চায় ওর মৃত্যু৷ কদিন পরপর থানা পুলিশের বিরক্তি, জাগায় জাগায় চুরিচামারি, ধরা পরলেতো মারের আর অন্ত নাই৷ এসব নানাবিধ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে চায় ওর গোটা পরিবারবর্গ৷ এরকম অপমান অপদস্থতার কারণে ওর বড় ভাই সহ পরিবারের সবাই পুলিশেও দিয়েছিল কয়েকবার৷ যতদিন জেল হাজতে থাকে ততদিন একটু শান্তি, জেল থেকে ফিরলেই শুরু হয় এই নেশাখোরের নেশার উপদ্রব৷ আর শুধু ও কেন,এমন লক্ষলক্ষ নেশাগ্রস্ত মানুষ আছে আমাদের দেশে৷ এইসব নেশাগ্রস্ত লোকে’ই নানা’রকমের অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড ঘটায়৷ওদেকে নামমাত্র কিছু টাকা দিয়ে যেকোন অপরাধজনিত কাজ করানো যায় খুবই সহজে৷ হচ্ছেও তাই, দেশে সরকার বিরোধী আন্দোলনেও দেখা যায় এসব নেশাগ্রস্ত হিরোইনছিদের ভূমিকা৷ গাড়িপোড়ানো, গাড়িভাংচুর, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ সহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড৷ এসব নেশাগ্রস্ত মানুষগুলো এক সময়তো ভাল ছিল, তাদের মন মানসিকতাও ভাল ছিল৷ তারা ভুল বশতঃ নেশার জগতে যাওয়ার কারণেই আজ তাদের এই অবস্থা৷ প্রশ্ন করা যেতে পারে এই নেশার জগতের বাদশারা কে বা কাহারা? এই নেশার জগতের বাদশা হলো আমাদের সমাজেরই একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি, যারা মাদক ব্যবসায়ী৷ যেসব এলাকায় এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বসবাস সেসব এলাকার সন্মানীত জনসাধারণও জানে কারা মাদব্যবসায়ী৷ কিন্তু বলার সাহস পায়না, সাহস পায়না এই কারণে, তাদের পিছনে আছে বড় ব্যক্তিবর্গ৷ তাদের ছত্রছায়ায় দিব্বি করে যাচ্ছে এই মরণাস্ত্র মাদকের ব্যবসা৷ শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে সন্মানিত পুলিশ বাহিনী টহলগাড়ি থামিয়ে মানুষ ডেকেডেকে তল্লাশী চালিয়ে শুধু খুঁজে গাঁজার পোটলা বা ফেন্সিডিলের বোতল৷ এইরকম তল্লাশীতে গাঁজা ফেন্সিডিল সহ ধরাও পড়ে অনেক মানুষ৷ তাদের হয়তো থানায় নিয়ে যায়,না হয় কিছু টাকা বকশিস পেলেই ছড়ে দেওয়া হয় ধন্যবাদ জানিয়ে৷ পুলিশের তরফ থেকে বলা হয় ধন্যবাদ আবার দেখা হবে৷ অথচ ধরা পড়া মানুষদের পুলিশ জিজ্ঞেস করেনা যে,এসব দ্রব্যাদি কোথায় থেকে পেলে? চলো দেখি কে সে এই মরণাস্ত্রের ব্যবসায়ী৷ কিন্তু না সেটা হচ্ছেনা, সেরকম হলেতো তাদের ইনকাম শেষ৷ পুলিশের এরকম টহল তল্লাশীতে আমার প্রায়ই পড়তে হয়, অফিসে যেতে বাসায় ফিরতে রাস্তাঘাটে সবসময় সবখানে৷ মাদক ব্যবসায়ী নিপাত যাক,যুবসমাজ মুক্তি পাক৷ একদিন আমি যে অফিসে চাকরি করি সেই অফিস থেকে বাজারের নৈশপ্রহরীকে সাথে নিয়ে যাচ্ছিলাম বাসায়, বাসার সামনে দাড়ানো ছিল একটা পুলিশের টহলগাড়ি৷ সামনে যেতেই ডাক পড়ল আমার, সামনে গেলাম, জিজ্ঞেস করলো কোথা থেকে আসলাম? উত্তরে আমি বললাম অফিস থেকে, তারা বললো রিকশা থেকে নামেন, আমি সাদরে আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রিকশা থেকে নামলাম৷ শুরুহয় আমার দেহ তল্লাশী, আমার সাথে ছিল তিন পেকেট কমদামী সিগারেট, কিছু টাকা ও ব্যবহার করা মোবাইল সেটখানা৷ মোবাইল সেট খানা তাদের খুব পছন্দ হয়েছিল, সেটখানা আর তাদের হাতথেকে আমার হাতে আসছেনা৷ আর সাথে পাওয়া তিনপেকেট কমদামী সিগারেট খুলে তন্নতন্ন করে ভেঙ্গেচুরে একাকার৷ কুকুর যেমন ময়লাযুক্ত স্থানে নাকদিয়ে শুঁকে তেমন করে তারা আমার সিগারেট গুলো শুঁকতে লাগলো৷ আমার প্রতি সন্মানিত পুলিশ ভাইদের প্রশ্ন, কী করেন, কোথায় থাকেন, তিনপেকেট সিগারেট কেন, এত দামী মোবাইল সেট কেন, ইত্যাদি ইত্যাদি৷ লজ্জার কথা লজ্জার সাথে লেখতে হয়, সন্মানিত পুলিশ ভাইয়েরা আমাকে প্রায় নেংটা করে তল্লাশী করলো৷ তারপর রিকশার গদির নিচেকার দিকে শুরুহলো তাদের তল্লাশী৷ প্রায় আধাঘন্টা সময়ব্যয়, তারপর মোবাইলসেট খানা ওলটপালট করে দেখে অতিকষ্টে আমার কাছে হস্থান্তর করলো৷ তারপর আমি বাসায় গেলাম৷ এই হলো আমাদের দেশের সন্মানিত পুলিশবাহিনীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অভিযান৷ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মান্থলি করা মাসহারা, আর আমাদের উপর তল্লাশী৷ আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, যদি আমাদের দেশের সন্মানিত পুলিশ বাহিনী ইচ্ছা করে যে ১২ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশের যত মাদকব্যবসায়ী আছে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনবো তাই তারা পারবে নিশ্চিত৷ আর যদি বলে ধরবো তো ছাড়বোনা তাহলে প্রমাণ হবে আমাদের দেশের সন্মানিত পুলিশ বাহিনী সত্যই জনগণের বন্ধু৷ কোর্ট কাছারির উকিল মোক্তারগণ যদি ওয়াদা করে যে সবার বেলায় জামিন হবে, মাদক ব্যবসায়ীদের বেলায় নয়৷ তবেই সেদিন আমাদের দেশের যুবসমাজ যারা মাদকের নেশায় নেশাগ্রস্ত তারা নেশার দ্রব্যাদি কিনতেও পারবেনা, আর সেবনও করতে পারবেনা৷ আর সেদিন থেকে একটা মাদকাসক্ত সন্তানের জন্য যন্ত্রণায় জ্বলেপুড়ে মরবেনা আমাদের দেশের কোন পরিবার, আর বোঝা হয়েও থাকবনা আমার মায়ের আদরের সন্তানেরা৷
Friday, 27 May 2016
হায়রে দিন তুমি অনেক বদলে গেছো
আমি তখন খুব ছোট, বয়স আনুমানিক পাঁচ-ছয় হবে, ক্লাশ ওয়ানে পড়ি। ওয়ান বলতে কী শুধু একটা বাল্যশিক্ষা বই আর একটা খড়ি মাটি। আমাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানাধীন বজরা রেলস্টেশনের পশ্চিমে মাহাতাব পুর গ্রামে। আমাদের বাড়ি থেকে, আমাদের প্রাইমারী স্কুলটা ছিলো প্রায় আধা কিঃমিঃ দূরে। স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক সহ মোট শিক্ষক ছিলো পাঁচজন, সবাই পুরুষ শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ছিলো আমার দূর সম্পর্কে জেঠামশয়। ওই স্কুলে জেঠামশয়ের আপন বলতে আমিই ছিলাম, সেই জন্য আমার প্রতি জেঠামশয়ের খুব নজর ছিল। পড়া না পারলে সাথে সাথে রাগ করতেন জেঠামশয়, আমার খুব রাগ হতো জেঠার প্রতি। সময় সময় কেঁদে কেঁদে মায়ের কাছে নালিশও জানাতাম আমি। যেদিন স্কুলে মার খেতাম, সেদিন জেঠামশয় বিকালবেলা হাঁটতে হাঁটতে আমাদের বাড়ি আসতেন। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতাম, মায়ের কাছে কী বলে জেঠামশয়। বলতে শোনা যেত, আরে নিতাই’র পড়া-লেখাতো ভাল হবেরে, অঙ্কে খুব ভাল মাথা ওর, ওকে যদি একটা মাস্টার দিয়ে প্রাইভেট পড়াতে পারতিস তবে পড়া-লেখায় একশতে একশ। মা বলতেন শুনেন দাদামশাই, ভাত খেতে ভাত পাই না, তার উপর ছেলের পড়ার মাষ্টার! মায়ের মুখের বাণী শুনে জেঠামশয় আস্তে আস্তে বসা থেকে উঠে চলে যেতেন। যাবার আগে মা’কে বলে যেতেন, শোন নিতাই’র মা, বিকেল বিকেল আমাদের বাড়ি ওকে পাঠিয়ে দিও আমি পড়াবো ওকে, পয়সাকড়ি লাগবে না। জেঠার বাড়ি আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি ছিল। মা আর আমার তিন (৩) বড়দিদি প্রতিদিন বিকালবেলা বাল্যশিক্ষা একটা বই দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন জেঠামশাইয়ের বাড়ি, সন্ধ্যার আগে আগে আবার চলে আসতাম, কোন দিন যেতাম, আবার কোন দিন যেতাম না। না যাওয়ার পিছনে কারণও আছে, কারণ হলো, সিলেট-পেন্সিল নাই, তার জন্য। আমরা ভাই-বোন সর্বমোট (৬) ছয়জন, আমি সবার ছোট বিধায় আমার প্রতি সবার একটু আদরের নজর। বড়দিদি’রা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে কলম আর কলাপাতার খাতা বানিয়ে দিতেন আমাকে। শুধু আমি কেন! গ্রামের সব শিশুদের একই অবস্থা তখনকার সময়। আমার হাতে খড়ি বাঁশের কঞ্চির কলম আর কলাপাতার খাতা। সে ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের কথা, টাকার খুবই দাম তখন। বাবা তখন নারায়নগঞ্জের চিত্তরঞ্জন কটন মিলে ১৫০ টাকা বেতন পেতেন। বড়দাদা বাবার সঙ্গে নারায়নগঞ্জে কাজের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বাবা বেতন পেলে, ১০০ টাকা দিয়ে বড়দাদাকে বাড়িতে পাঠাতো, বড়দাদা ১০ টাকার মত রেখে বাকী ৯০ টাকা মায়ের কাছে দিতেন। মা এই টাকা দিয়ে সারা মাস অতি কষ্টেসৃষ্টে আমাদের সংসারটা চালাতেন। বড়দাদা যখন বাড়িতে আসতেন তখন আমার আনন্দের সীমা থাকতো না, আমার খুব আনন্দ, কেননা, বড়দাদা আমাকে সাথে করে বাজারে নিতেন, বিস্কুট কিনে দিতেন, আরো কত কী! বড়দাদা বাড়ি আসতে আমার জন্য একটা কলম এনেছে, খুবই সুন্দর কলমটা। এক মুহুর্তের জন্যও কলমটাকে হাতছাড়া করতাম না, যদি কেহ নিয়ে যায় বা হারিয়ে যায় তাই। কলমটা নিয়ে স্কুলে যেতাম, সেই কলমটা দেখার জন্য সমবয়সী ছাত্রছাত্রীরা ঘিরে ধরতো শুধু কলমটা একটু দেখার জন্য। তখন আমাদের মাহাতাব পুর গ্রামের মধ্যে শুধু আমার বাবা ও আমার বড়দাদাই থাকতেন নারায়নগঞ্জ, তার মানে বিদেশ। বড়দাদা বা আমার বাবা বাড়ি আসলে, সকাল-বিকাল বাড়িতে শুধুশুধু মানুষ আসতেন চা পান করার জন্য। বাবার রেশন কার্ডের গম, চিনি, সরিষার তৈল এগুলি বড়দাদা বাড়ি আসার সময় নারায়নগঞ্জ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। আমার মায়ের চা পান খুব প্রিয় ছিল, মানুষের আগমন টের পেলেই মা চা জ্বাল দিতে শুরু করে দিতেন, দুই-তিনজন গুরু ব্যক্তি মানুষ আসলে সবাইকে কাপে করে চা পরিবেশন করতেন। তখন’তো আমাদের গ্রামে কারো বাড়িতে কাপ-প্রিজ ছিল না। চা পান করতো নারিকেলের আইছা করে, বা গ্লাসে করে। আমার মায়ের দেখাদেখি ক’জন মানুষ সেই চৌমুহনী টাউন হতে চা’পাতা আর চা’র কাপ কিনে আনতেন। আমাদের বাড়ি থেকে চৌমুহনীর দূরত্ব প্রায় (৪) চার মাইল। এই চার মাইল হেঁটে যেত পয়সাকড়ির অভাবের কারণে। রেলগাড়ি আর নৌকা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না চৌমুহনী যাওয়ার। তখনকার সময় খুব কম মানুষে’ই ছিলো, পয়সা খরচ করে চৌমুহনী যাওয়ার, একেবারে নাই বললেও আমার ভুল হবে না। এই পয়সার অভাবে তখন দেখতাম মানুষকে লেংটি পরতো, লেংটি হলো দোপাট্টা এক টুকরা কাপড়, যা কোমরের সামনে থেকে পিছনে কাইতনে আঁটকাইয়ে গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখার কাপড়। আমি নিজেও লেংটি পরতাম, সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার সময় প্যান্ট আর সাধারণ একটা জামা, স্কুল ছুটির পর বাড়িতে এসে’ই কিছুক্ষণ হয়তো বস্ত্রহীন হয়ে থাকতাম, পরে মা অথবা বড়দিদি’রা হাতে উঠিয়ে দিতেন সেই লেংটি খানা পরার জন্য। যেমন বনের জংলী মানুষেরা পরিধান করে থাকে, ঠিক তেমনই। এরকম শুধু আমার বেলায় না, আমাদের সমবয়সী সবার বেলায়’ই ছিল এই রীতিনীতি। বুড়ো মানুষের বেলায়ও বহাল থাকতো এই মূল্যবান লেংটি পরার নিয়ম। প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা, এখনে আমার সমবয়সী যদি কোন ভাই-বোন থাকে আমাদের নোয়াখালীর, তবে হয়তো ওইসব ভাই-বোনদের’ই বিশ্বাস হবে এই লেংটির ইতিহাস। সেই লেংটি আবার বাজারে বিক্রী হতো, এই লেংটিকে খুব সযত্নে রাখা হতো, যেন ছিঁড়ে না যায়। আমি যা দেখেছি একটা ধূতি আর একটা গলাকাটা পাঞ্জাবী রাখতো এক জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য, আর সবসময় পড়তো লেংটি। মহিলাদেরতো ছায়া-ব্লাউজ ছিলোই না, খুব কম মায়েরা’ই ছায়া-ব্লাউজ পরিধান করতো। আমার হাফপ্যান্ট, মা নিজে’ই ঘরের বোটিদাও দিয়ে কেটে সুই-সূতা দিয়ে হাতে সেলাই করে প্যান্ট তৈরি করে দিতেন, আমি পরতাম। গায়ের জামাও আমার মা নিজ হাতে বানিয়ে দিতেন, শুধু আমার মা নয়, আমি দেখেছি, এখনে আমার স্পষ্ট মনে আছে, গ্রামের বেশির ভাগ মায়েরা’ই পরিবারের পোশাক তৈরির কাজটা নিজেরা’ই করতেন। একটা পয়সা স্কুলে যাওয়ার সময় আমি পাই নাই, যদিও পাঁচ পয়সা বা দশ পয়সা পেতাম, বাবা কিম্বা বড়দাদা বাড়িতে অাসলে, নয়’তো নয়। আমরা যখন ১৯৭২ সালের শেষ দিকে নোয়াখালী ছেড়ে নারায়নগঞ্জে আসি, তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হলাম, নারায়নগঞ্জের বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলা ফ্রী প্রাইমারী স্কুলে। স্কুলে যাওয়ার সময় মা পাঁচ পয়সা দিতেন আমাকে, তাও প্রতি দিন নয়। এই পাঁচ পয়সার মধ্যে কোন দিন এক পয়সা ফেরতও আনতাম, পরদিন যদি আবার পয়সা না পাই, তার জন্য। আর এখন যুগের পরিবর্তন ঘটেছে, আমার অফিসের সামনে “নিউ লক্ষীনারায়ন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয়” যখন স্কুল ছুটি হয় দেখি ৭/৮ বছরের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ১০০/৫০০ টাকার নোটও ভাঙ্গিয়ে দোকান থেকে সওদা কিনে। আর বেশির ভাগ ছেলে-মেয়েদের হাতে তো মোবাইল ফোন আছেই। এসব দেখে সেই আগেকার দিনের স্মৃতি গুলো নিজের মন’কে নাড়া দেয়, হায়রে দিন, ভাবি নাই তুমি যে এত বদলে যাবে।
কৃষ্ণচূড়া আড্ডা
ব্লগালোচনা মঙ্গলবার ১৭মে২০১৬, পূর্বাহ্ন ০৪:৪৬ 0Tweet গত ৮ই মে রোজ রবিবার রাত আনুমানিক ১০:৩০ মিনিটে আমার মোবাইলে একটা কল আসলো, কল রিসিপ করে বললাম নমস্কার ৷ অপর পান্ত থেকে একজন ভদ্রমহিলা’র গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠলাম ৷ নমস্কার গ্রহণ করে’ই জানতে চাইলো আমি নিতাই’দা না কি ! বললাম হ্যাঁ আমি নিতাই বাবু ৷ কিন্তু আপনি ? হাসির সুরে বললো, দাদা আমি আইরিন সুলতানা ৷ আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার দশা, আমি হতভম্ব হয়ে বললাম দিদি আপনি আমার নমস্কার আবার পুনরায় গ্রহন করুন ৷ আইরিন সুলতানা দিদি হেসে দিয়ে বললো’ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, এখন শুনুন’ আগামী ১৩ই মে রোজ শুক্রবার বিকাল ৩:০০ ঘটিকার সময় সংসদ্ ভবনের সামনে চন্দিমা উদ্যানে আমারা বিডি নিউজের সকল ব্লগার’রা এক’সাথে একটা আড্ডার আয়োজন করেছি৷ আপনিও আসবেন আশা রাখি ৷ আমি বললাম, সম্মানিত দিদি, ওইদিন কে’কে ওখানে আসছেন? আইরিন সুলতানা দিদি বললেন, দাদা সবাইকে’ই জানানো হয়েছে তবে যারা-যারা আসতে ইচ্ছুক তারা’তো অবশ্য’ই আসবে ৷ আর এ বিষয়ে আমাদের সম্মানিত ব্লগার তানজির খানের একটা পোষ্ট দেখুন ব্লগে ৷ পোষ্টের শিরোনাম কৃষ্ণচূড়া আড্ডাঃ কৃষ্ণচূড়ায় মেতে আছে পথিক আর পথ, সঙ্গে জারুল আর সোনালু ফুলেল নগর রথ ৷ আমি বললাম আচ্ছা দিদি আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আসার জন্য, বাকী’টা মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে ৷ আইরিন দিদিকে নমস্কার জানিয়ে ফোনালাপ শেষ করে ভাবতে লাগলাম আপন মনে ৷ খানিক পরে বিডি নিউজ ব্লগে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম তানজির খান দাদার আমন্ত্রণী পোষ্টখানা ৷ পোষ্টখানা পড়ে দেখলাম, বুঝলাম, একটা মন্তব্য দিলাম, মন্তব্যে লিখলাম তানজির দাদা, আমার আসার ইচ্ছা আছে, আমার প্রতি আপনাদের হৃদয়ের টান থাকলে না এসে কী আর পারবো ! পরদিন আমার একজন বন্ধুকে বললাম, আমার সঙ্গে যাবে না’কি চন্দিমা উদ্যানে? ও’বললো কেন? কী ব্যাপার ! বললাম আমাদের একটা আড্ডা আছে ওখানে ৷ আমার বন্ধু প্রথমে বললো যাবো, দুদিন পরে বললো যাবো না ৷ আমি বললাম ঠিক আছে’ না যাও ! আমি একা’ই যাবো, আর কী করা ৷ দিন যাচ্ছে আর মনের ভাবনাও বাড়ছে ! ভাবনা শুধু একটা’ই আমার দুটো কান নিয়ে ৷ তার মানি হলো, আমার একটু শ্রবণ শক্তি কম তাই ৷ কাজী শহীদ শওকত দাদাকে ফোন করে বললাম, দাদা আপনি অবশ্য’ই আসবে কিন্তু ! কাজী শহীদ শওকত দাদা বললেন ঠিক আছে দাদা আসবো ৷ আমি হাঁফ-ছেড়ে বাঁচলাম ৷ আরো জানালাম কুর্দিস্তান প্রবাসী আমাদের প্রিয় ব্লগার সৈয়দ আশরাফ মহি-উদ্-দ্বীন ভাইকে ৷ জানালাম এই কারণে যে, তানজির খান দাদার পোষ্টখানা পড়ে সেখানে একটা মন্তব্য দেওয়ার জন্য ৷ আরো জানালাম প্রিয় ব্লগার জাকির হোসেইন দাদাকে, তাকেও কৃষ্ণচূড়া আড্ডায় যোগদান করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, জাকির দাদার হাতে সময়ের অভাব বিধায় তিনি আড্ডায় যোগদানে অপারগতা স্বীকার করলেন ৷ আর কী করা ! শুক্রবার সকাল-সকাল অফিসে গিয়ে তাড়াতাড়ি অফিসের কাজ শেষ করে ফোন করলাম কাজী শহীদ শওকত দাদার কাছে ৷ কাজী শহীদ শওকত দাদা বললেন, জ্বী’দাদা আমি রেডি হবো ১১/১২ টার সময়, তবে শতভাগ নিশ্চিত থাকবেন আমি আসবো’ই ৷ অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম ১১টায়, স্নান’ধূতি করে জামাকাপড় পড়তে পড়তে দেখি আকাশের অবস্থা বেগতিক ৷ আমার স্ত্রী বললো, তুমি যেতে পারবে’তো? আমি বললাম দেখি সৃষ্টিকর্তা কী করেন ! বাসা হতে বাহির হলাম ১২ টায়, বাসষ্ট্যান্ড পৌঁছতে না পৌঁছতে’ই নামলো মুশলধারায় বৃষ্টি ৷ একটা দোকানে অবস্থান নিলাম, আবার ফোন করলাম কাজী শহীদ শওকত দাদার কাছে, কাজী শহীদ শওকত দাদা বললেন আমি দাদা বাসষ্ট্যান্ড আছি, বাসে উঠবো কিছুক্ষণ পর ৷ আমার মনের চিন্তা দূর হলো, আমি বললাম দাদা আমিও বাসের অপেক্ষায় আছি ৷ এই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভিজে-ভিজে বাসষ্ট্যান্ড পৌঁছে বাসে উঠি ৷ বাস চলছে আর বৃষ্টিও হচ্ছে, সেই বৃষ্টি শেষ হয়েছে ফারম গেইট আসার পর ৷ ফারম গেইট নেমে একটা রিক্সা নিয়ে সোজা চলে গেলাম চন্দিমা উদ্যান৷ রিক্সা থেকে নেমেই কাজী শহীদ শওকত দাদাকে ফোন করলাম, কাজী শহীদ শওকত দাদা বললো দাদা’ আমি বর্তমানে আব্দুল্লাহ পুর আছি, আসতে আরো ১ ঘন্টা লাগতে পারে ৷ একথা শুনে নিজের কাছে নিজে একা হয়ে গেলাম, কারণ হলো, এখানে’তো আমাকে আর কেউ চিনবে’না ৷ কার সাথে কথা বলবো, কার হাত ধরে হাটবো্ ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ খানিক পর ফোন করলাম আইরিন সুলতানা দিদির কাছে, দিদি ফোন রিসিপ করে বললো, দাদা আপনি এখন কোথায়? আমি বললাম দিদি আমি’তো চন্দিমা উদ্যানের মূল’ফটকের সামনে’ই দাঁড়িয়ে আছি ৷ দিদি বললেন দাদা আপনি সোজা চলে আসুন লেকের উপর ব্রিজের সামনে, আমরা ব্রিজের উপরে’ই আছি ৷ দিদির কথা শুনে আমি সামনে হাঁটতে লাগলাম, অনেক খানি হাঁটার পর পিছন থেকে ডাক পড়লো এক পুলিশ ভাইয়ে’র ৷ বললো এই যে,দাঁড়ান ! কোথয় যাচ্ছেন আপনি? আমি হাঁটতে হাঁটতে জবাব দিলাম এখানে আমাদের একটা আড্ডা আছে’তো তাই যাচ্ছি সামনে ৷ পুলিশ ভাই বললো এখানে আড্ডা ! কোথায়? আমি বললাম এই যে চন্দিমা উদ্যানে ৷ পুলিশের সাথে কথা বলতে বলতে’ই আইরিন সুলতানা দিদির ফোন, তখন আমি ব্রিজের খুব সামনা-সামনি,আইরিন সুলতানা দিদি হয়তো ফলো করেছে, পুলিশ বেচারা আমার পিছু লেগেছে, তখন পুলিশের সামনে’ই আইরিন সুলতানা দিদির সাথে কথা বলছি ৷ ব্রিজের দিকে তাকাতে’ই দেখছি আইরিন সুলতানা দিদি হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ৷ পুলিশ ভাই এই দৃশ্য দেখে’ই আমার কাছ থেকে পিছু হটে ৷ ব্রিজের উপর গিয়ে দেখতে পেলাম আইরিন সুলতানা দিদির সাথে আরো দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে, আগে আইরিন সুলতানা দিদিকে নমস্কার জানালাম, পরে কিছু একটা জিজ্ঞেস করার আগে’ই আইরিন সুলতানা দিদি পরিচয় করিয়ে দিলেন দুজনের সাথে ৷ একজন আমার গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের সাহেব, আরেক জন যার আমন্ত্রণে এই চন্দিমা উদ্যানে আসা, তিনি হলেন সম্মানিত তানজির খান সাহেব ৷ সাথে আরো দুটো সোনামণি ছিল, তাদের দিকে আমি বেশি একটা ফলো করিনি ৷ কিছুক্ষণ পর আসলেন মহাগুরু সম্মানিত মোনেম অপু সাহেব, প্রণাম করলাম, আশীর্বাদ নিলাম ৷ জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছি, কী করছি ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ এর কিছুক্ষণ পর আসলেন কাজী শহীদ শওকত দাদা, হাসিমুখে সবার সামনে উপস্থিত ৷ তখন আমরা সবাই হাততালি দিয়ে কাজী শহীদ শওকত দাদাকে স্বাগত জানা’ই ৷ এরপ আস্তে আস্তে চন্দিমা উদ্যানের দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম সবাই৷ আসতে আসতে’ই সাথের সোনামণিদের নাম জানা হলো, শ্রাবণ ও সুমনা, এখনো লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত ৷ তবু ব্লগের প্রতি ভালবাসা’ ব্লগারদের প্রতিও ভালবাসা তাদের অনেক ৷ তাইতো এত কষ্ট আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই কৃষ্ণচূড়া আড্ডায় যোগদান ৷ যেতে যেতে আমাদের সাথে যোগ হলেন আশিক ও ফারুখ, হাতে হাত মিলালাম কথা বললাম ৷ এই কৃষ্ণচূড়া আড্ডায় যোগদান করে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাহলো “আন্তরিকতা” আমি দেখলাম আমরা যেন এক মায়ের পেটের ভাইয়ের মত ৷ যেন কতদিনের পরিচিত আমরা ! কত’না ভালবাসা আমার এই সহ ব্লগার ভাইদের অন্তরে ৷ চন্দিমা উদ্যানের রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে বসলাম আমরা সবাই, এর মধ্যে আসলেন সম্মানিত মজিবর রহমান দাদা ও শফিক মিতুল দাদা ৷ আড্ডা আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো, একজন একজন করে কিছু কথাও রাখলেন সংক্ষিপ্ত ভাবে, আমি খানিক পর-পর শুধু ভিডিও করেই যাচ্ছি অনবরত সাথে ছিবিও উঠাচ্ছি ৷ এভাবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যামণির আগমন টের পাচ্ছি আমি, ভাবলাম আর’তো এই আনন্দধাম লগ্ন উপভোগ করতে পারলাম না’ জীবিকার টানে ৷ গন্তব্যে আমাকে পৌঁছাতে হবে তাড়াতাড়ি, দেরি না করে বললাম তানজির খান দাদার কাছে ৷ আমার কথা শুনে তানজির খান দাদা বললেন, তো ঠিক আছে যদি থাকতে নাইবা পাড়েন, তবে’তো আর ধরে রাখা যাবে না দাদা ৷ তখন সবাই আস্তে আস্তে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম, চন্দিমা উদ্যানের সামনে ঢাকা-মিরপুর সড়কের কাছে আসলাম আমরা সবাই ৷ আইরিন সুলতানা দিদির সাথে ছিল চানাচুর ভাজা, চিপ্ স ও কিছু সুস্বাদু লজেন্স, সেগুলি সবাই মিলে খেলাম ৷ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম, কিন্তু বিদায় নিয়ে আসতে পারলাম না মহাগুরু মোনেম অপু, গুরুমহাশয় জুলফিকার জুবায়ের, তানজির খান ও সম্মানিত মজিবর রহমান দাদা এ ক’জনের সাথে দেখা করে ৷ নারায়নগঞ্জ ফিরলাম রাত ৭:৩০ মিনিটের সময় ৷ পৌঁছার সাথে সাথে’ই আমার কর্ম শুরু করে রাত ১২টায় বাসায় গেলাম ৷ বাসা এসে’ই ভিডিও গুলো এডিটিং করা শুরু করে দিলাম নিজের মত করে ৷ এই কৃষ্ণচূড়া আড্ডা চির শরণীয় করে রাখতে ভিডিও গুলো ইউটিউবে আপলোড করতে লাগলাম পরদিন সকাল থেকে ৷ এক এক করে প্রথমে তিন খানা, পরে আরো তিন খানা, মোট ছয়’খানা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করলাম যাতে এই কৃষ্ণচূড়া আড্ডা শরণীয় হয়ে থাকে সারাজীবন ৷ আশা করি থাকবেও সারাজীবন, এতে আর কোন প্রকার হেরফের হবেনা ৷ জীবনের শেষ সময়ও হয়তো ভিডিও গুলো দেখতে পারবো ৷ এই স্মরণীয় কৃষ্ণচূড়া আড্ডায় গিয়েছি খালি হাতে, এনেছি অনেক কিছু আমার হৃদয় ভরে ৷ যদি সবাই উপস্থিত থাকতো তবে আরো আনন্দ হতো, আরো স্মরণীয় হয়ে থাকতো এই ১৩ই মে ২০১৬ ইংরেজীর কৃষ্ণচূড়া আড্ডা ৷