Wednesday, 1 June 2016

কবিরা গুনাহ সমূহ (৩)

কবিরা গুনাহ সমূহ (৩)

জনসম্মুখে প্রকাশ করা
84. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা
85. বেশি বেশি অভিশাপ দেয়া
86. বিশ্বাসঘাতকতা করা
87. অঙ্গীকার পূরণ না করা
88. আমানতের খিয়ানত করা
89. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
90. ঋণ পরিশোধ না করা
91. বদ মেজাজি ও এমন অহংকারী যে উপদেশ গ্রহণ করে না
92. তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদি ঝুলানো
93. পরীক্ষায় নকল করা
94. ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা
95. ইচ্ছাকৃত ভাবে জেনে শুনে অন্যায় অবিচার করা
96. আল্লাহর বিধান ব্যতিরেকে বিচার-ফয়সালা করা
97. দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে দীনী ইলম র্অজন করা
98. কোন ইলম সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা সত্ত্বেও তা গোপন করা
99. নিজের পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করা
100. আল্লাহর রাস্তায় বাধা দেয়া

posted from Bloggeroid

কবিরা গুনাহ সমূহ (২)

কবিরা গুনাহ সমূহ (২)

44. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা
45. ওজনে কম দেয়া
46. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
47. ইসলামী আইনানুসারে বিচার বা শাসনকার্য পরিচালনা না করা
48. জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা বা পরের জমি জবর দখল করা
49. গীবত তথা অসাক্ষাতে কারো দোষ র্চচা করা
50. দাঁত চিকন করা
51. সৌন্দর্য্যের উদ্দেশ্যে মুখ মন্ডলের চুল তুলে ফেলা বা চুল উঠিয়ে ভ্রু চিকন করা
52. অতিরিক্ত চুল সংযোগ করা
53. পুরুষের নারী বেশ ধারণ করা
54. নারীর পুরুষ বেশ ধারণ করা
55. বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো
56. কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা
57. পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেয়া
58. পুরুষের টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পোশাক পরিধান করা
59. মুসলিম শাসকের সাথে আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা
60. ডাকাতি করা
61. চুরি করা
62. সুদ লেন-দেন করা, সুদ খেলা বা তাতে সাক্ষী থাকা
63. ঘুষ লেন-দেন করা
64. জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের নিকট থেকে প্রাপ্ত সম্পদ বন্টনের পূর্বে আত্মসাৎকরা
65. স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা
66. জুলুম-অত্যাচার করা
67. অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা
68. প্রতারণা বা ঠগ বাজী করা
69. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎআমল করা
70. র্স্বণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা
71. পুরুষের রেশমি পোশাক এবং র্স্বণ ও রৌপ্য পরিধান করা
72. সাহাবিদের গালি দেয়া
73. নামাযরত অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করা
74. মনিবের নিকট থেকে কৃতদাসের পলায়ন
75. ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলী রীতিনীতি অথবা বিদাতের প্রতি আহবান করা
76. পবিত্র মক্কা ও মদীনায় কোন অপর্কম বা দুষ্কৃতি করা
77. কোন দুষ্কৃতকারীকে প্রশ্রয় দেয়া
78. আল্লাহর ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করা
79. বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া
80. যে নারীর প্রতি তার স্বামী অসন্তুষ্ট
81. স্বামীর অবাধ্য হওয়া
82. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা
83. স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা

posted from Bloggeroid

কবিরা গুনাহ সমূহ দেখেনিন (১)

কবিরা গুনাহ সমূহ দেখেনিন (১)

1. আল্লাহর সাথে শরিক করা
2. নামায পরিত্যাগ করা
3. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া
4. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা
5. পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা
6. যাদু-টোনা করা
7. এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎকরা
8. জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা
9. সতী-সাধ্বী মুমিন নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া
10. রোযা না রাখা
11. যাকাত আদায় না করা
12. ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হজ্জ আদায় না করা
13. যাদুর বৈধতায় বিশ্বাস করা
14. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
15. অহংকার করা
16. চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগানো)
17. আত্মহত্যা করা
18. আত্মীয়তার সর্ম্পক ছিন্ন করা
19. অবৈধ পথে উপার্জিত র্অথ ভক্ষণ করা
20. উপকার করে খোটা দেয়া
21. মদ বা নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা
22. মদ প্রস্তুত ও প্রচারে অংশ গ্রহণ করা
23. জুয়া খেলা
24. তকদীর অস্বীকার করা
25. অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা
26. গণকের কাছে র্ধনা দেয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া
27. পেশাব থেকে পবিত্র না থাকা
28. রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামে মিথ্যা হাদীস র্বণনা করা
29. মিথ্যা স্বপ্ন র্বণনা করা
30. মিথ্যা কথা বলা
31. মিথ্যা কসম খাওয়া
32. মিথ্যা কসমের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করা
33. জিনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া
34. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া
35. মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শোনার চেষ্টা করা
36. হিল্লা তথা চুক্তি ভিত্তিক বিয়ে করা।
37. যার জন্যে হিল্লা করা হয়
38. মানুষরে বংশ র্মযাদায় আঘাত হানা
39. মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা
40. মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা
41. মুসলিমকে গালি দেয়া অথবা তার সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া
42. খেলার ছলে কোন প্রাণীকে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু বানানো
43. কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা

posted from Bloggeroid

রোজার ফরযসমূহ

রোজার ফরযসমূহ

রমযানের রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। রোযার আরবী শব্দ সাওম। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- বিরত থাকা। প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নরনারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তরোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং রমযান মাসে চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযানের রোযা রাখা ফরয।
রোযার ফরয ৩ টি:
১. নিয়্যত করা
২. যাবতীয় পানাহার বর্জন করা
৩. ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকা।

posted from Bloggeroid

রোজা বঙ্গের কারন (২)

রোজা বঙ্গের কারন (২)

রোযাদারের যদি রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় আর তার ফলে ইন্জেকশন প্রয়োগে রক্ত প্রবেশ করান হয় তবে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৬.মাসিক ঋতু স্রাব ও সন্তান প্রসব জনিত স্রাব।
৭.শিংগা বা এ জাতীয় কিছু লাগিয়ে রক্ত বের করা, তবে যদি রক্ত স্বাভাবিকভাবে যেমন নাক থেকে রক্তরণ বা দাঁত উঠানোর ফলে বা এ ধরনের অন্য কারণে বের হয় তবে রোযা বিনষ্ট হবে না।
৮.বমি করলে : ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করলে রোযা নষ্ট হবে কিন্তু অনিচ্ছায় বমি করলে রোযা নষ্ট হবে না।

posted from Bloggeroid

রোজা ভঙ্গের কারন (১)

রোজা ভঙ্গের কারন (১)

রোযা ভঙ্গের কারণ

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না
রোযাদার যদি ভুলক্রমে বা নাজেনে বা বাধ্য হয়ে কিছু খেয়ে ফেলে, তবে রোযা নষ্ট হবে না, আল্লাহ বলেন:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
“হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুল করে অথবা অজ্ঞাতসারে দোষে লিপ্ত হই তবে আমাদেরকে পাকড়াও কর না।” ( সূরা আল-বাকারা : ২৮৬ )
আল্লাহ তাআলা বলেন :
إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ
“তবে তার জন্য মহা শাস্তি নয় যাকে কুফরী করতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচল।” সূরা আন - নাহাল : ১০৬
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ وَلَكِنْ مَا تَعَمَّدَتْ قُلُوبُكُمْ
“যা তোমরা অজ্ঞাতসারে ভুল করেছ তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই কিন্তু তা তোমাদের সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে।” সূরা আল-আহ্যাব : ৫
* অতএব, রোযাদার যদি ভুলবশত: পানাহার করে তবে ভুলের কারণে তার রোযা নষ্ট হবে না।
* আর কেউ যদি সূর্য ডুবে গেছে অথবা ফজর এখনও হয়নি এরূপ মনে করে পানাহার করে তবে তার অজ্ঞতার কারণে রোযা নষ্ট হবে না।
* যদি কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও গলায় পানি চলে যায় তবে রোযা নষ্ট হবে না।
* স্বপ্নদোষ হলেও এতে তার কোন ইচ্ছা না থাকায় রোযা ভঙ্গ হবে না।
রোযা ভঙ্গের কারণ ৮ টি
১.স্ত্রী সহবাস : রোযাদার যদি রমাযানের দিনে স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হয় তবে উক্ত রোযা কাযা আদায়সহ জটিল কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর তা হলো :
একটি গোলাম আজাদ করা, যদি সামর্থ্য না থাকে তবে ধারাবাহিক দুই মাস (মাঝে বিরতি ছাড়া) রোযা রাখতে হবে আর যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।
২.বীর্যপাত : জাগ্রতাবস্থায় হস্ত মৈথুন, স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করা, চুমো দেয়া, স্পর্শ করা অথবা অন্য কোন কারণে বীর্যপাত হলে রোযা বিনষ্ট হয়ে যাবে।
৩.পানাহার : উপকারী বা ক্ষতিকারক (যেমন ধূমপান) কোন কিছু পানাহারে রোযা ভেঙে যায়।
৪.ইনজেকশন যোগে খাদ্যের সম্পূরক খাদ্য জাতীয় কোন কিছু প্রয়োগ করলে। কিন্তু তা যদি খাদ্যের সম্পূরক না হয় তবে শরীরের যেখানেই প্রয়োগ করা হোক যদিও তার স্বাদ গলায় অনুভূত হয় রোযা নষ্ট হবে না।
৫.ইনজেকশন যোগে রক্ত প্রয়োগ : যেমন

posted from Bloggeroid

আমল

আমল

ইবাদত করার জন্য সাহায্য কর।
ফায়েদাঃ এই দুআ পড়া কত উপকারী তা রাসূলুল্লাহ  এর কথা থেকেই বুঝা যায়।
দলীলঃমুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ  আমার হাত ধরে বললেন, হে মুআয! আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমিও আপনাকে অতি ভালবাসি। তখন তিনি বললেনঃ তাহ’লে প্রত্যেক ফরয নামাযের পর এই বাক্যগুলো অবশ্যই বলবে- ‘রাব্বি আইন্নী আলা যিকরিকা ’। -নাসায়ী।
দশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ দশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং দশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা।
ফায়েদাঃযে ব্যক্তি এই যিকির করবে, সে জান্নাতে যাবে।
দলীলঃআব্দুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ দুটি কাজ যে করতে পারবে, সে জান্নাতে যাবে। (১) প্রত্যেক নামাযের পর দশবার ‘সুবহানাল্লাহ’ দশবার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং দশবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। ইবনু উমর বলেনঃ আমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ  হাতে গণে বললেন, এহল মুখে ১৫০, কিন্তু মীযানে দেড় হাজার। (২) আর যখন ঘুমাতে যাবে তখন ১০০ বার এই তিনটি যিকির করবে, তাহবে মুখে ১০০, কিন্তু মীযানে এক হাযার। -মুসলিম, আবুদাঊদ, তিরমিযী।
প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর তিন বার এই দুআ পড়বে।
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ وَسَلاَمٌ عَلَي الْمُرْسَلِيْنَ وَالْحَمْدُ لِله رَبَّ الْعَالَمِيْنَ
উচ্চারণঃ‘সুব্হানা রাব্বিকা রাব্বিল ইযযাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া সালামুন আলাল মুসসালীন ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।”
দলীলঃআবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী  যখন নামায শেষ করতেন তখন তিনবার বলতেন ‘সুব্হানা রাব্বিকা রাব্বিল ইযযাতি আম্মা ইয়াছিফুন ওয়া সালামুন আলাল মুরসালীন ওয়াল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।” -আবু ইয়’ালা, সুয়ূতী।

posted from Bloggeroid

আমল

আমল

আছে, যা পাঠকারী কখনো বঞ্চিত হবেনা। ৩৩ বার ‘সুব্হানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আল্হাম্দুলিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবর’। -মুসলিম। একবার সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস পাঠ করবে। (সূরাগুলির জন্য ৬ নং আমল দেখুন।) দলীলঃউকবা ইবনে আমির (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ আমাকে প্রত্যেক নামাযের পর মুআ’উয়েযাত অর্থাৎসূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করার আদেশ দিয়েছেন।” মাগরিব ও ফজরের ছলাতের পর উক্ত তিনটি সূরা তিন বার পড়বে। দলীলঃউকবা ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ  আমাকে প্রত্যেক নামাযের পর ‘মুআওয়েযাত’ (তথা কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক ও কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস) পড়ার আদেশ দিয়েছেন।” একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা। আয়াতুল কুরসীর জন্য আমল নং -১৩ দ্রষ্টব্য। ফায়েদাঃযে ব্যক্তি এই যিকির করবে, তার জান্নাতের রাস্তা সহজ হয়ে যাবে। দলীলঃআবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর ‘আয়াতুল কুরছি’ পড়বে তাকে মৃত্য ব্যতীত অন্য কোন বস্তু বেহেশতে যাওয়া থেকে বাধা দিতে পারবেনা।” মাগরিব ও ফজরের পর ১০ বার এই যিকির পড়বে- لاَإِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ ، لاَشَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَيُمِيْتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْر . উচ্চারণঃ-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ী ওয়া য়ুমীতু বিয়াদিহিল খায়রু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর।” ফায়েদাঃযে ব্যক্তি ফজরের পর এই দুঅ’া পড়বে, সে সবচেয়ে উত্তম আমলকারী হবে। দলীলঃআবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর উভয় পা ফিরানোর পূর্বে একশতবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা --।” পড়বে, সে সেদিন পৃথিবীবাসীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আমলকারী হবে। তবে যে ব্যক্তি তার মত বলবে কিংবা তার চেয়ে বেশী বলবে তার কথা ভিন্ন। একবার এই দুঅ’া পড়বে- أَللَّهُمَّ أَعِنِّى عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ উচ্চারণঃআল্লাহুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিকির, শুকর এবং উত্তমরূপে

আমল

আমল

الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ، وَلاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الحْسَنُ ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْكَرِهَ الْكَافِرُوْنَ .
উচ্চারণঃ-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু, ওয়া লাহুল ফজলু, ওয়া লাহুচ ছানাউল হাসানু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিছীনা লাহুদ্দীনা, ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন।
দলীলঃআব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ  নামাযের সালামের পর বলতেন- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, -। -মুসলিম।
৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার الْحَمْدُ لِلَّهِ ‘আলহামদু লিল্লাহ’ ৩৩ বার اللهُ أَكْبَر ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং শত পূর্ণ করার জন্য একবার বলবে-
لاَإِلهَ إِلاَّاللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيٍّ قَدِيْرٍ
উচ্চারণঃ-‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর’ ।
ফায়েদাঃযে ব্যক্তি নামাযের পর এই যিকির করবে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মত হলেও আল্লাহ তাঅ’ালা ক্ষমা করে দিবেন।
দলীলঃআবুহুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ নবী কারীম  বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছলাতের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদু লিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এহ’ল ৯৯। আর শত পূর্ণ করার জন্য বলবে- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, -
। তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও তা হয় সমুদ্রের ফেনার ন্যায়।
৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার الْحَمْدُ لِلَّهِ ‘আলহামদু লিল্লাহ’ এবং ৩৪ বার اللهُ أَكْبَر ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে।
ফায়েদাঃযে ব্যক্তি নামাযের পর এই যিকির করবে, সে কখনো বঞ্চিত হবেনা।
দলীলঃকাঅ’াব ইবনে উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ  বলেছেনঃ নামাযের পর এমন কিছু যিকর

posted from Bloggeroid

আমল

আমল

“যে ব্যক্তি ভাল কাজ করবে, হোক সে পুরুষ কিংবা নারী, এবং সে ঈমানদার হবে, এরূপ লোক জান্নাতে দাখিল হবে, আর তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না।” (আন-নিসা ৪:১২৪)
ফরয নামাযের পর করণীয় আমল সমূহ
১.সালামের পর একবার الله أكبر ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তিন বার أستغفر الله ‘আস্তাগ্ফিরুল্লাহ’ বলবে। অর্থাৎহে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ফায়েদাঃএর দ্বারা নামাযের ত্র“টি-বিচ্ছুতি ক্ষমা হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
দলীলঃইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ  এর ছলাত শেষ হওয়া বুঝতে পারতাম তাকবীর তথা আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমে।
২. ছাউবান (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ  যখন ছলাত থেকে ফিরতেন তখন তিনবার ‘আস্তাগ্ফিরুল্লাহ’ বলতেন। - মুসলিম, আবুদাউদ।
একবার এই যিকির বলবে-
اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الجْلَاَلِ وَالْإِكْرَامِ .
উচ্চারণঃ-আল্লাহুম্মা আন্তাস্সালাম, ওয়া মিনকাস্ সালাম, তাবারাকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমিই শান্তি, তোমার থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। তুমিই বরকতপূর্ণ হে মহান মর্যাদ ও সম্মানের অধিকারী।
দলীলঃ ছাউবান (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ  যখন ছলাত থেকে মুখ ফিরাতেন তখন তিনবার ‘আস্তাগ্ফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেন ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস্সালাম, ওয়া মিনকা-।
একবার এই যিকির বলবে-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ، أَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلاَيَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ .
উচ্চারণঃ-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মানেয়া লিমা আ’তাইতা, ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়ালা ইয়ান্ফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
দলীলঃমুগীরাহ ইবনু শু’বা (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ  প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর -“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, লা
’ বলতেন। -বুখারী, মুসলিম।
একবার এই যিকির বলবে-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَشَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ

posted from Bloggeroid

রোজার আমলসমূহ প্রথম পর্ব

রোজার আমলসমূহ প্রথম পর্ব

রমযান মাসের আমল
রমযান মাস আল্লাহ তা‘আলা এক বিশেষ নিয়ামাত। সাওয়াব অর্জন করার মৌসুম। এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, রহমাত, বরকত ও নাজাতের মাস-রমাদান মাস। আলকুরআনে এসেছে,
‘‘রমাদান মাস, যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে’’ [সূরা আলবাকারাহ : ১৮৫].
রমাদান মাসের ফযিলাত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘‘রমাদান- বরকতময় মাস তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোযা পালন আল্লাহ তোমাদের জন্য ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়, বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃংখলাবদ্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে আল্লাহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে বঞ্চিত হল (মহা কল্যাণ হতে)’’ [সুনান আত-তিরমিযি: ৬৮৩]।
এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো :
এক.
ইখলাস অর্থাৎ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎএসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে। আল-কুরআনে এসেছে,
“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ

posted from Bloggeroid

মেয়েদের মোবাইল আসক্তি বেশি

মেয়েদের মোবাইল আসক্তি বেশি

স্মার্টফোনে আসক্তি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এর স্বাস্থ্যগত কুপ্রভাব জানা সত্ত্বেও মোবাইল ফোনের এ আসক্তি থেকে অনেকেই বের হতে পারেন না। দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, পুরুষের চেয়ে নারীর স্মার্টফোন আসক্তি বেশি। মেয়েরা দিনে চার ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন নিয়ে ব৵স্ত থাকে।
সম্প্রতি আজু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চ্যাং জায়ে উয়ুন এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার ছয়টি কলেজের ১ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে করা জরিপের ভিত্তিতে তিনি এ প্রতিবেদন তৈরি করেন।

এ ধরনের গবেষণা এটিই প্রথম। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীর স্মার্টফোনে আসক্তিতে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৫২ শতাংশ মেয়ে চার ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ। ২৩ শতাংশ মেয়ে ছয় ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এ সময় তারা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে বেশি যায়। এর মধ্যে ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম বেশি ব্যবহার করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েদের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীলতা ছেলেদের চেয়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি। এ ছাড়া কারও সঙ্গে কথা বলতে গেলে ৩৭ শতাংশ মেয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে কোনো অবসর পেলে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ে। তথ্যসূত্র: কোরিয়া টাইমস।

posted from Bloggeroid

শহরের নারীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বেশি

শহরের নারীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বেশি

জেসমিন রহমান (ছদ্মনাম) রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদেই কাজ করেন। দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে ছোট্ট সংসার। স্বামীও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী। পেশা ও সামাজিক জীবনে সাফল্য পেলেও ব্যক্তিজীবনে ভালো নেই জেসমিন রহমান। উঠতে-বসতে স্বামীর কটু কথা শুনতে হয়। সম্মান করে কিংবা ভালোবেসে কথা বলা দূরে থাক, তাঁকে হেয় করাই যেন স্বামীর লক্ষ্য। জেসমিন বলেন, ‘শুধু ঘরে নয়, বাইরের মানুষের সামনেও খারাপ ব্যবহার করেন। কখনো ভাবেনও না এতে শুধু আমার নয়, পরিবারের সম্মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ছেলেমেয়ের বন্ধুদের সামনেও অপমান করেন।’ স্বামীর এমন আচরণে প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট পেতেন। প্রতিবাদও কম করেননি। ‘কিন্তু তাঁর আচরণের কোনো পরিবর্তন নেই। এখন মেনে নিয়েছি। জানি না, একজন শিক্ষিত পুরুষ বউকে অপমান করে কী আনন্দ পায়!’
১৭ বছরের বিবাহিত জীবন রাহিমা আক্তারের (ছদ্মনাম)। বিয়ের বছর দুই পার হতেই সংসারে অশান্তির শুরু। কোনো কিছু মনঃপূত না হলেই বকাঝকা করেন ব্যবসায়ী স্বামী। খোঁটা না দিয়ে কোনো কথা বলেন না। গালিগালাজও করেন। রাহিমা বলেন, ‘বাজার করা থেকে রান্না করা, সন্তানদের পড়ালেখা থেকে আত্মীয় সামলানো সবই আমাকে করতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষা নেই।’ রাহিমার মনে হয়েছে, ‘স্বামী আমাকে স্ত্রী হিসেবে কোনো দিন সময় দেননি। পরিবারে আমার মতামতের কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু ছেলেমেয়ের কথা ভেবে নিজেকে সামলাই।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে কিছুদিন চাকরিও করেছিলেন রাহিমা। ‘চাকরিজীবী বউ ভালো হয় না’ বলে অভিযোগ ছিল। তাই সংসারের কথা ভেবে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। তবু থামেনি স্বামী-শ্বশুরের মানসিক নির্যাতন।
কেবল জেসমিন রহমান বা রাহিমা আক্তারের জীবনেই এমনটা ঘটেনি। দেশের বেশির ভাগ নারীই এভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গ্রামের তুলনায় শহরের নারীরা বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৫২ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন করেন। গ্রামে এই হার ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ শহরে ৬ শতাংশ নারী বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। জরিপটি ২০১১ সালে চালানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, নিজস্ব মূল্যবোধের কারণে শহরের নারীরা এখন জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করেছেন। নারীদের মধ্যে ‘অসহনীয় আচরণ’ সহ্য করার প্রবণতা কমছে। তাঁরা এখন প্রতিবাদ করে এমনকি আইনের আশ্রয়ও নিয়ে থাকেন। ফলে পুরুষেরাও নারীকে অবদমনের পথ, নিয়ন্ত্রণের কৌশল বদলে ফেলেছেন। তাঁরা শারীরিক নির্যাতনের বদলে বেছে নিয়েছেন মানসিক নির্যাতন। এতে তাঁরা নির্যাতনও করতে পারছেন, আবার প্রমাণও থাকছে না। ফলে শহরের নারীরা এখন বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী কোনো না কোনোভাবে বছরে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হন। এসবের মধ্যে আবার মানসিক নির্যাতনের হারই বেশি। জীবনসঙ্গীর হাতে মানসিক নির্যাতনের হার ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে যৌন বা শারীরিক নির্যাতনের হার ৬৭ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক নির্যাতন ৫৩ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপে গ্রামাঞ্চল-শহরাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়নি। জনসংখ্যা ও গৃহায়ণশুমারি-২০১১ অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার, যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮ লাখ নারী গ্রামে বাস করেন আর শহরে ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার।
নারীদের ওপর মানসিক নির্যাতন বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, ‘শহুরে মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ কমে গেছে। পাশের ফ্ল্যাটে থেকেও জানা যাচ্ছে না একে অপরকে। এতে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।’
সমাজ যেভাবে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, সেভাবে আমাদের মানসিকতা বদলাচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। বললেন, ‘আমরা মুখে আধুনিকতার কথা বললেও সনাতন জীবনবোধ পাল্টাইনি। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ধরন ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে শহরে নারীদের প্রতি মানসিক অত্যাচার বাড়ছে। তবে অনেক শারীরিক অত্যাচারের ঘটনাও ঘটছে, যেগুলো সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে প্রকাশ পায় না।’ যেসব নির্দেশক ধরে জরিপ চালানো হয় সেগুলো আরও স্পষ্ট করা দরকার বলেও মত দেন এই নারীনেত্রী।

posted from Bloggeroid

ইন্টারনেটে পড়াশোনার জগৎ

ইন্টারনেটে পড়াশোনার জগৎ

জাহাঙ্গীরনগর ইসলামের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। ছোটবেলা থেকে তাঁর নানা বিষয়ে শেখার আগ্রহ। কলেজে পড়ার সময় একবার ভর্তি হয়েছিলেন ফটোগ্রাফি কোর্সে। নিয়মিত পড়াশোনা চাপে সে কোর্স আর বেশি দূর এগোয়নি। তখন মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফুরন্ত সময়ে নিশ্চয় আগ্রহের সবকিছু শিখে ফেলবেন! কিন্তু ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনের চক্করে পড়ে সেসব যেন বেমালুম ভুলতেই বসেছিলেন। আর তখনই এক নতুন রাজ্যের খোঁজ পেলেন তিনি। বিশ্বখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বৃত্তিবিষয়ক তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে তাঁর নজর পড়ে মেন্যুবারের ‘অনলাইন এডুকেশন’ বোতামটি। সেটি তাঁকে নিয়ে যায় ‘কোর্সেরা’ নামের নতুন রাজ্যে। যেখানে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করার সনদ। তারপর তাঁকে আর আটকায় কে! কয়েক মাস পেরোতেই প্রাচীন সভ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তন, একুশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি...নানা বিষয়ে বিনে পয়সায় কোর্স করার সুযোগ হলো তাঁর।
অনলাইনে পড়াশোনার এই গল্প শুধু ফারিবা ইসলামের একা নয়। হালের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণেরা জানার আগ্রহ থেকে পছন্দসই বিষয়ে অনলাইন-কোর্স করছেন। তেমনি একজন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ইউসুফ মুন্না। অনলাইনে কোর্স নিয়ে মুন্না বলেন, ‘আমি লিডারশিপ, পাবলিক স্পিকিং, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের পাঠ্যবইতে তো তো এসব নিয়ে তেমন কিছুই নেই। অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করছি।’

অনলাইন কোর্স কী ও কেন
সরল কথায়, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে এই অনলাইন কোর্স। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিগতভাবেও অনলাইনে কোর্স করানো হয়। এই কোর্সগুলো মূলত দুইভাবে করানো হয়—অর্থের বিনিময়ে কিংবা নিখরচায়। তবে বিনা মূল্যে কোর্সের ক্ষেত্রেও অনেক সময় সনদ সংগ্রহ করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়।
অনলাইনে কোর্স বিষয়ে ই-মেইলে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ এমারত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কোনো কোর্স করার এটি ভালো সুযোগ। আমি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যে ক্লাস যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শ্রেণিকক্ষে নিচ্ছি, সেই ক্লাসেই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে স্কাইপে। এ ধরনের কোর্সের বিস্তার দিন দিন আরও বাড়বে।’
কোর্সগুলো বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। তিন সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাসেরও হতে পারে।
আমাদের চাকরির বাজারে কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রে কোর্সগুলোর গুরুত্ব কেমন? জানতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইমুম হোসেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘অনলাইন কোর্স আসলে জানার পরিধি বাড়িয়ে দেয়। যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচরাচর জানার বা শেখার সুযোগ কম। তা এই কোর্সগুলোর মাধ্যমে খুবই সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে চাকরি বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এই সনদের গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত খুব একটা তৈরি হয়নি। তবুও শেখা তো হলো, এ-ই বা কম কী।’
যেসব বিষয়ে কোর্স
ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, কলা ও সংস্কৃতি, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রকৌশল, ভাষা, আইন, গণিত, সাহিত্য, নৈতিকতা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, খাদ্য ও পুষ্টি, সংগীত, তথ্যপ্রযুক্তিসহ কত শত বিষয়ে যে কোর্স করা যায়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গত বছর প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা গেল, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ২০০ কোর্স আহ্বান করেছে। আর এসব কোর্সে অংশ নিচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিক্ষার্থী।

যেভাবে খোঁজ পাবেন
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই কোর্স সম্পর্কে জানা যাবে। এর বাইরে শুধু অনলাইন কোর্সবিষয়ক বিশেষায়িত বিভিন্ন ওয়েবসাইটও রয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আহ্বান করা কোর্স সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকেন। এর বাইরে বিশেষায়িত ওয়েবসাইটগুলোও বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ওয়েবসাইট সম্পর্কে।
এডেক্স: বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করে এডেক্স (www.edx.org)। শিক্ষার জগতে বিপ্লব আনতেই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তৈরি করেছেন এই ওয়েবসাইট। শুরুতে এমআইটির শিক্ষকেরা এমআইটিএক্স নামের প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইন কোর্স চালু করেন। সারা বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন এই ওয়েবসাইটে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৭০০ বিষয়ের ওপর বিনা মূল্যে কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এখানে।
কোর্সেরা: বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর অনলাইন-পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হলো কোর্সেরা (www.coursera.org)। ইংরেজি, স্প্যানিশ, চায়নিজ, রুশ, জার্মানিসহ ১২ ভাষায় কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এই ওয়েবসাইটে। যেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার সায়েন্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতিসহ ২৮টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করার সুযোগ পান। অনলাইন কোর্সের বিশেষায়িত ওয়েবসাইটটিতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার কোর্স করানো হচ্ছে!
শুধু এডেক্স বা কোর্সেরাই নয়, এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে। গুগলের কল্যাণে সহজেই সেসবের খোঁজ মিলবে।

posted from Bloggeroid

বয়স বুঝে ত্বকের যত্ন

বয়স বুঝে ত্বকের যত্ন

সুস্থ সুন্দর ত্বক তো সবাই চায়৷ এ জন্য পরিচর্যা চাই নিয়মিত। এখন তো দেখা যায়, এই গরম আর হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি৷ ঋতু বদলের এই প্রভাবটা পড়ে ত্বকেও৷ এ সময় ত্বকের ধরন ও বয়স বুঝে কেমন হবে যত্ন সে বিষয়ে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
একেক বয়সে ত্বকে একেক রকম সমস্যা দেখা দেয়, জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মাসুদা খাতুন৷ যেমন যাদের এখন কৈশোর চলছে, তাদের ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় সে ক্ষেত্রে ব্রণের সমস্যা হতে পারে৷ গরমের কারণে এই সময়ে গ্ল্যান্ডের নিঃসরণ বাড়ে৷ যে কারণে তৈলাক্ত ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে পড়ে৷ এ ছাড়াও ছত্রাকের সংক্রমণ (ফাঙ্গাল ইনফেকশন) আর ঘামাচি সব বয়সী ত্বেকর জন্যই সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ গরমে খুব বেশি ঘামলে ত্বকে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। গরমের কারণে ঘামাচিও হয়ে থাকে৷ এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে ত্বক সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আয়ুর্বেদ রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, যেকোনো সমস্যার সমাধানে বয়সভেদে এবং ত্বকের ধরন অনুযায়ী যত্ন নেওয়া প্রয়োজন৷ আমাদের দেশে ত্বকের ধরন সাধারণত স্বাভাবিক, শুষ্ক, মিশ্র, তৈলাক্ত ও সংবেদনশীল। তবে ত্বকের ধরনটা যা-ই হোক না কেন, প্রসাধনীর চেয়ে আয়ুর্বেদিক রূপচর্চা ত্বকের জন্য ভালো বলে জানালেন এই দু্ই বিশেষজ্ঞ৷ ঘরে বসেই কীভাবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পাবেন সেই বিষয়ে জানালেন রাহিমা সুলতানা৷

কিশোর বয়সে ত্বকের যত্ন
এই বয়সে ত্বকের প্রধান সমস্যা ব্রণ৷ স্বাভাবিক ত্বকের জন্য সপ্তাহে এক দিন ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া, পরিমাণমতো তরল দুধ, আধা চা-চামচ মধু এবং গাজরের রস মিশিয়ে হালকা স্ক্রাবিং করা যেতে পারে৷ এরপর মুখ ধুয়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিলেই চলবে৷ যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তারা মেথি, লাল আটা এবং শশার রস দিয়ে বানানো প্যাক ১০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলবে। স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য টক দই এবং শশার রস মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তবে এ বয়সে ত্বকের যত্নে খুব বেশি রূপচর্চা না করাই ভালো
তরুণ ত্বকের যত্ন
প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের ত্বকে মেলানিন বেশি থাকার কারণে সানবার্ন হয় না৷ যেটা হয় সেটা হলো সান ট্যানড৷ এ জন্য স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে এই সময়ে এক চা-চামচ করে কাঠ বাদাম, সঙ্গে লাল আটা এবং সামান্য হলুদের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকবে। শুষ্ক ত্বকের যত্নেও এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন৷ এদিকে তৈলাক্ত ত্বকে শশার রস, মুলতানি মাটি, গাঁদা ফুলের পেস্ট মিশিয়ে ২০ মিনিট ত্বকে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।


চল্লিশের পরের ত্বক
চল্লিশ পেরোলে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়ে৷ যে কারণে প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের৷ চল্লিশের পরে ত্বকে মৃত কোষ বা ডেড সেল একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ এ জন্য সপ্তাহে এক দিন গোসলের আগে ত্বক পরিষ্কার করতে চালের গুঁড়া এবং টক দই ব্যবহার করতে পারেন৷ স্ক্রাবিংয়ের জন্য কাঠ বাদামের পেস্ট, চালের গুঁড়া এবং দুধটাও ভালো কাজে দেয়। এটাও পরিমাণমতো মিশিয়ে ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন৷ যেহেতু এই সময় ত্বক ঝুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, এ জন্য ডিমের সাদা অংশ এবং যবের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন৷ এটা ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করবে৷
শুধু মুখের ত্বকের যত্নেই নয়, ধরন বুঝে হাত, পা ও পিঠের যত্নেও এই প্যাকগুলো ব্যবহার করা যাবে।

শুধু রূপচর্চাই নয়
ত্বক ভালো রাখতে শুধু বাহ্যিক রূপচর্চাই নয়, প্রয়োজন ভালো ঘুম এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ব্যায়ামও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও প্রতিদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে৷ নিয়মিত গোসল লোমকূপ পরিষ্কার করে শরীরের টকসিন বের করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে ত্বক বাঁচাতে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে ভুল হয় না যেন।

posted from Bloggeroid

লিচু আর আমের উপকার দেখুন

লিচু আর আমের উপকার দেখুন

এই গরমের দিনে জাম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। এর ফলে শরীরে পানির সমতা রক্ষা হয়। একই সঙ্গে রক্তশূন্যতাও দূর করে জাম। এভাবেই জামের গুণাগুণের কথা বলছিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি ও পথ্যবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ। তিনি জানালেন গরমের এ সময়টাতে আরেক রসাল ফল লিচুও খাওয়া যেতে পারে। এতে থাকা সুগার শরীরে জোগাতে পারে শক্তি। লিচু দেখতে যেমন সুন্দর, এর পুষ্টিগুণও নাকি তেমন ষোলো আনা। জাম ও লিচু—ফল দুটির গুণাগুণ সম্পর্কে জানিয়েছেন এই পুষ্টিবিদ।

লিচু
* লিচুর আছে ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা। ক্যানসার কোষ বিভাজনকে বাধা দেয়।
* উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এর উপাদানগুলো। লিচু খেলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।
* হজমশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে ক্ষুধাবর্ধক হিসেবেও কাজ করে।
* সুস্থ হাড়ের জন্য লিচু অতিপ্রয়োজনীয়। হাড়ের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য ওষুধের বিকল্প এ ফলটি।
* ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পরিমিতভাবে লিচু খাওয়া উচিত৷
* এর জলীয় অংশ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
* এই রোদ-গরমের সময়ে ক্ষতিকর অতিবেগুনিরশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করবে।
* রাসায়নিক উপাদান: ১০০ গ্রাম লিচুতে শক্তির পরিমাণ ৬৬ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৬.৫৩ গ্রাম, আমিষ ০.৮৩ গ্রাম, চর্বি ০.৪৪ গ্রাম, আঁশ ১.৩ গ্রাম।

জাম
* ক্যানসারের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা আছে জামের। বিশেষ করে মুখের ক্যানসার প্রতিরোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
* রক্ত পরিষ্কার করে শরীরের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।
* চোখের সংক্রমণজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
* জামে গার্লিক অ্যাসিড, ট্যানিস নামে একধরনের উপকরণ রয়েছে, যা ডায়রিয়া ভালো করতে সাহায্য করে।
* ডায়াবেটিস রোগ ও হরমোনজনিত রোগীদের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপযোগী।
* রাসায়সিক উপাদান: প্রাকৃতিকভাবে পাকা প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্য উপযোগী জামে আছে ৬০ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৫.৬ গ্রাম, চর্বি .২৩ গ্রাম, আমিষ .৭২ গ্রাম, জলীয় অংশ ৮৩.১৩ গ্রাম, ভিটামিন এ ৩ আইইউ, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, লৌহ .১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম।
গ্রন্থনা: এস এম নজিবুল্লাহ চৌধুরী

posted from Bloggeroid

নিজেকে মেলে ধরুন

নিজেকে মেলে ধরুন

অফিসের এক কর্মী মুখ গুঁজে কাজ করেন সারা দিন। কাজের মানও বেশ ভালো। বছর শেষে দেখা গেল, তাঁর মূল্যায়ন ঠিকভাবে হচ্ছে না। অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে নিজের মনের কথা তাঁর বস বা অন্য সহকর্মীদের বলতে পারেন না। অফিসে সবার মধ্যে থেকেও তিনি আলাদা। অফিসেই নয়, কারও বাড়িতে কোনো দাওয়াত, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁর কথা সবাই ভুলে যান। কর্মীর অন্তর্মুখিতা তাঁকে সমস্যায় ফেলে দেয়। অফিসে মন দিয়ে কাজ করা ভালো। তবে অন্তর্মুখিতা যোগাযোগক্ষমতার একধরনের প্রতিবন্ধকতা। এটি উতরে যেতে না পারলে কর্মজীবনে ঝক্কিতে পড়তে হবে।
প্রতিষ্ঠান অনেক সময় মনে করতে পারে, কেন তারা অন্তর্মুখী কর্মীকে গুরুত্ব দেবে? যিনি নিজের কথাই ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেন না, তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কতটুকু কার্যকর। কিছু কিছু কাজ আছে—হিসাব বিভাগে, গবেষণায় কিংবা লেখালেখির কাজে কিছুটা অন্তর্মুখী হলেও চলে। সময়টা যেহেতু নিজেকে প্রকাশ করার, তাই এসব কাজে অন্তর্মুখী না হলেই ভালো।
গ্রো এন এক্সেলের প্রধান নির্বাহী এম জুলফিকার হোসেন বলেন, কর্মজীবনে প্রবেশের আগে অন্তর্মুখী স্বভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। এক দিনে সম্ভব নয়, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। অফিসের বস ও সহকর্মীদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৬৫ শতাংশ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে নেতৃত্বদানে এগিয়ে যেতে পারছেন না। প্রতিষ্ঠানের কোনো নতুন বিষয় নিয়ে ভাবনা, পরিকল্পনা—এ ধরনের কাজ অন্তর্মুখী স্বভাবের কর্মীরা ভালো করেন।
অন্তর্মুখী স্বভাবের হলে সফলতা আসে না। বিষয়টি এমন নয়। বিল গেটস নিজেকে অন্তর্মুখী ব্যক্তি মনে করেন। কিন্তু তিনি তো বিশ্বসেরা সফল ব্যক্তিদের একজন।
কর্মীর অন্তর্মুখী স্বভাব কাটানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের তেমন কিছু করার থাকে না। বস হয়তো তাঁকে এই স্বভাবের দিকটা বুঝে মূল্যায়ন করতে পারেন। কোনো মিটিংয়ে তাঁকে বলার সুযোগ দিতে পারেন। তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কোনো একটা প্রেজেন্টেশন তাঁকে সবার সামনে বলতে দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের নিরীক্ষা খুব বড় কোনো মিটিংয়ে না করে ছোট ছোট মিটিংয়ে করতে পারেন। কিন্তু মনোবিদেরা মনে করেন, এটি থেকে নিজেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিজেকে সময়ের সঙ্গে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে তুলতে হবে। এটি শুধু কর্মক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিজীবনেও অনেক কাজে আসবে।

কী করতে পারেন
* নিজের মনের ভাবনা প্রথমে কাছের বন্ধুদের মধ্যে, এরপর সহকর্মীদের বলতে পারেন। নতুন নতুন আইডিয়া মিটিংয়ে বললে আপনার দিকে সবার নজর পড়বে, যা আপনাকে উন্নতির দিকে এগিয়ে দেবে।
* আয়নার সামনে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। প্রতিদিন পনেরো মিনিট এই চর্চা করতে পারেন।
* নির্দিষ্ট কোনো কারণে আপনি অন্তর্মুখী স্বভাবের হলে সেই কারণ খুঁজে বের করুন। সেটি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে ক্ষেত্রে কাছের কোনো মানুষ বা মনোবিদের সাহায্য নিতে পারেন।
* নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। হীনম্মন্যতা থাকলে শুধু পিছিয়েই পড়বেন। কোনো বিষয়ে দক্ষতা কম থাকলে তা শেখার চেষ্টা করুন। দেখবেন, ঠিকই পারছেন

posted from Bloggeroid

উচ্চ রক্তচাপকে হেলা মনে করা টিক নয়

উচ্চ রক্তচাপকে হেলা মনে করা টিক নয়

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়
উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। এটি ধীরে ধীরে মানুষের হৃদ্‌যন্ত্র, কিডনি, চোখ ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। অনেকে অজান্তেই উচ্চ রক্তচাপ বয়ে বেড়ান। মাত্রা বেড়ে গেলে রোগীকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। হঠাৎ করে রক্তচাপ খুব বেশি বেড়ে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
সাধারণত রক্তচাপ ১৮০/১২০ মিলিমিটার পারদের ওপরে উঠে গেলেই এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় রোগীর দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসতে পারে। পাশাপাশি মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব, শ্বাসকষ্ট, লাল রঙের প্রস্রাব হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, গর্ভকালীন খিঁচুনি বা শরীরের কোনো অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের যেকোনো লক্ষণ ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য কয়েকটি পরামর্শ:
* রক্তচাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে নিজে নিজে নানা ওষুধ বাড়িয়ে খেয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না। জরুরি অবস্থায় রক্তচাপ কমানোর ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি ভিন্ন। সেটা চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দিন।

* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত যে ওষুধ সেবন করেন, সেটা হঠাৎ বাদ দিলে এ ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ রকম ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা বা বদলানো যাবে না।

* ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ও খুব বেশি উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ কারণ থাকে। যেমন: কিডনি রোগ, হরমোনজনিত রোগ, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের প্রতিক্রিয়া, হৃৎপিণ্ডে জন্মগত ত্রুটি, হরমোন নিঃসরণকারী টিউমার ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি, বিশেষত যদি রোগীর বয়স কম হয়ে থাকে।

* গর্ভকালীন শনাক্ত হওয়া উচ্চ রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে প্রাণসংহারী হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়মিত মাপতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

posted from Bloggeroid

মায়েরা কেন সন্তানকে ভালবাসেন যেনে নিন

মায়েরা কেন সন্তানকে ভালবাসেন যেনে নিন

মা সন্তানের সবচেয়ে আপনজন। আবার মায়ের কাছেও সন্তানের থেকে প্রিয় কেউ নেই, কিছু নেই। সৃষ্টির শুরু থেকেই মা-সন্তানের বন্ধন চিরন্তন, শাশ্বত। সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এ বন্ধন তৈরি হয়ে যায়।

মায়ের সঙ্গে সন্তানের সবচেয়ে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক। বিপদ-আপদ, ঝড়-ঝামেলা, দুঃখ-ব্যথা থেকে মা সন্তানকে আগলে রাখেন। পৃথিবীর আর কেউ মায়ের মতো করে সন্তানকে ভালোবাসেন না। তাই তো বড় হয়েও একটু ব্যথা পেলে অবচেতনভাবে কণ্ঠস্বর থেকে বেরিয়ে আসে ‘মা’। মায়ের ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না। এমনকি বাবার থেকেও মায়েরা সন্তানকে অনেক বেশি ভালোবাসেন বলেই প্রচলিত।
গেল ১৬ মের ঘটনা। রেললাইনে আটকে আছে বাস। ছুটে আসছে ট্রেন। মা বিবি মরিয়ম বিপদ আঁচ করতে পেরে তিন সন্তানকে বাস থেকে দ্রুত নামিয়ে দেন। এরপর নিজের প্রাণ বাঁচাতে লাফ দেন। কিন্তু ততক্ষণে চাকার নিচে তিনি। এতে তিন ছেলে প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যান তিনি। অথচ সন্তানদের না নামাতে গেলে ঠিকই বেঁচে যেতেন মা। যুগে যুগে সন্তানদের জন্য মায়ের এমন আত্মত্যাগের হাজারো উদাহরণ রয়েছে। ঘটনাটি চট্টগ্রামে ঘটেছে।

তবে মা-সন্তানের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার পেছনে একটি নিয়ামক অনেক আগেই বের করেছেন গবেষকেরা। মা-সন্তানের এই বন্ধনের জন্য আছে একটি বিশেষ হরমোনের প্রভাব।
হরমোনের বিষয়টি তোলার পর কেউ কেউ হয়তো ভাববেন, মায়ের ভালোবাসায় আবার এসব কী! কিন্তু বিষয়টি তা-ই। একাডেমিক জার্নাল আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের তথ্যানুযায়ী, অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণের ফলে মা তাঁর সন্তানকে ভালোবাসেন। ইসরায়েলের বার-ইলান ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এমনটিই বলা হয়েছে। আর এটা করেছেন রুথ ফেল্ডম্যান। এতে বলা হয়েছে, অক্সিটোসিন হরমোনের কারণেই মা ও সন্তানের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বেশি হয়ে থাকে। আর এ জন্যই মায়েরা অন্য যে-কারও চেয়ে সন্তানকে বেশি ভালোবাসেন। গবেষণাটি ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়।
এতে জানানো হয়, যখন একজন মা তাঁর সন্তানকে স্পর্শ করেন বা কোলে নেন, তখন অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এতে মায়ের ভালো লাগা বা সুখানুভূতিও বাড়ে। মা আনন্দে থাকেন। আবার যখন মা সন্তানকে স্পর্শ করতে পারেন না বা সন্তান থেকে দূরে থাকেন, তখন এই হরমোন নিঃসরণ কমে যায়। তখন মায়েদের মন খারাপ থাকে, বিষণ্নতা বেড়ে যায়।
প্রকৃতির নিয়মেই সন্তান প্রসবের সময় মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। আর এতেই প্রসবকালীন ব্যথা অনেকটা প্রশমিত হয়। একজন নারীর জীবনে সন্তান জন্মদানের পরের কয়েকটি মুহূর্তে এই হরমোন নিঃসরিত হয় সবচেয়ে বেশি। এ জন্য এই সময় মায়েরা সন্তানের প্রতি বেশি আকর্ষণ বা ভালোবাসা অনুভব করেন। মায়ের কাছে সন্তান জন্মদানের সময়টি শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে হয়। অক্সিটোসিন হরমোনটি ঐন্দ্রজালিক হরমোন নামেও পরিচিত।
এই হরমোনের কারণেই মূলত মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো উপভোগ করেন। এ সময়টা তাঁরা তুলনামূলক বেশি প্রফুল্ল থাকেন। সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে যে মা-সন্তানের বন্ধন দৃঢ় হয়—সেই প্রচলিত কথারই প্রমাণ এটা।

posted from Bloggeroid

বাংলাদেশের ম্যাচ দিয়েই শুরু ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দেখে নিন টুর্নামেন্টর সময় সূচি

বাংলাদেশের ম্যাচ দিয়েই শুরু ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি দেখে নিন টুর্নামেন্টর সময় সূচি

০১ জুন, ২০১৬
তাহলে বাংলাদেশকে দিয়েই শুভসূচনা হচ্ছে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির।
অনেক ‘র‍্যাঙ্কিং-যুদ্ধ’ পেরিয়ে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর টুর্নামেন্টটিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সাতে থেকে প্রথমবারের মতো মাশরাফিরা খেলবেন টুর্নামেন্টের মূলপর্বে। সেই টুর্নামেন্টটির সূচনাই হবে বাংলাদেশের ম্যাচ দিয়ে। প্রথম ম্যাচে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
আগামী বছরের ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টটির সূচি আজ ঘোষণা করেছে আইসিসি। ২০১৭ সালের ১-১৮ জুন পর্যন্ত হবে ১৫ ম্যাচের এই টুর্নামেন্টে। তাতে আট দলকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। গ্রুপ ‘এ’-তে ইংল্যান্ড ছাড়া বাংলাদেশের দুই সঙ্গী অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ ‘বি’-তে আছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
গ্রুপে প্রতিটি দলই একবার করে একে অন্যের মুখোমুখি হবে। দুই গ্রুপের সেরা দুটি দল যাবে সেমিফাইনালে।
২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানকে টপকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৬ সালেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব, তবে সেটি ছিল বাছাইপর্বে। সেবার বাছাইয়ের তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হিসেবে এবারই প্রথম মূলপর্বে খেলা।

২০১৯ বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডেই। এই টুর্নামেন্টে খেলা বাংলাদেশের জন্য সেই বিশ্বকাপের জন্য একটা মহড়া তো হবেই। তবে এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, এই টুর্নামেন্টের তিন মাস পরই র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল নিশ্চিত করবে পরের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা। বাছাই পর্বের ঝামেলায় যেতে না চাইলে বাংলাদেশকে থাকতে হবে সেই আটের মধ্যেই। সূত্র : আইসিসি।

টুর্নামেন্টের সূচি:
১ জুন : ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ, ওভাল
২ জুন : অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, এজবাস্টন
৩ জুন : শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা, ওভাল
৪ জুন : ভারত-পাকিস্তান, এজবাস্টন
৫ জুন : অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ, ওভাল (দিবা/রাত্রি)
৬ জুন : ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড, কার্ডিফ
৭ জুন : পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা, এজবাস্টন (দিবা/রাত্রি)
৮ জুন : ভারত-শ্রীলঙ্কা, ওভাল
৯ জুন : নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ, কার্ডিফ
১০ জুন : ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া, এজবাস্টন
১১ জুন : ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, ওভাল
১২ জুন : শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান, কার্ডিফ

১৪ জুন : প্রথম সেমিফাইনাল, (এ১-বি২), কার্ডিফ
১৫ জুন : দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, (এ২-বি১), এজবাস্টন

১৮ জুন : ফাইনাল, ওভাল।

* দিনের ম্যাচগুলো শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে, দিবা/রাত্রি ম্যাচগুলো সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে।

posted from Bloggeroid

বাংলার প্রাচীন কালের ইতিহাস না যেনে তাকলে যেনে নিন

বাংলার প্রাচীন কালের ইতিহাস না যেনে তাকলে যেনে নিন

বাংলার ইতিহাস বলতে অধুনা অথবা আদি বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বিগত চার সহস্রাব্দের ইতিহাসকে বোঝানো হয়েছে । গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদ এক অর্থে বাংলাকে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল । কিন্তু তা সত্ত্বেও ভারতের ইতিহাসে বাংলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
প্রাচীন কালের ইতিহাস

প্রায় চারহাজার বছরের পুরনো তাম্রযুগের ধ্বংসাবশেষ বাংলায় পাওয়া যায় ।

ইন্দো-আর্যদের আসার পর অঙ্গ ও বঙ্গ এবং মগধ রাজ্য খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতকে গঠিত হয় । এই রাজ্যগুলি বাংলা এবং বাংলার আশেপাশে স্থাপিত হয়েছিল । অঙ্গ ও বঙ্গ এবং মগধ রাজ্যের বর্ণনা প্রথম পাওয়া যায় অথর্ববেদে প্রায় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে ।

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে বাংলার বেশিরভাগ এলাকাই শক্তিশালী রাজ্য মগধের অংশ ছিল । মগধ ছিল একটি প্রাচীন ইন্দো আর্য রাজ্য । মগধের কথা রামায়ণ এবং মহাভারতেও পাওয়া যায় । বুদ্ধের সময়ে এটি ছিল ভারতের চারটি প্রধান রাজ্যের মধ্যে একটি । মগধের ক্ষমতা বাড়ে বিম্বিসারের রাজত্বকাল ৪৯১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৫৪৪খ্রীষ্টাব্দের ভেতরে,, এবং তার ছেলে অজাতশত্রুর রাজত্বকাল ৪৯১ থেকে ৪৬০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ আমলে । বিহার এবং বাংলার অধিকাংশ জায়গাই মগধের ভিতরে ছিল ।

৩২৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী মগধের নন্দ সাম্রাজ্যের সীমানার দিকে অগ্রসর হয় । এই সেনাবাহিনী ক্লান্ত ছিল এবং গঙ্গা নদীর কাছাকাছি বিশাল ভারতীয় বাহিনীর মুখোমুখি হতে ভয় পেয়ে যান । এই বাহিনী বিয়াসের কাছে বিদ্রোহ ঘোষনা করে এবং আরও পূর্বদিকে যেতে অস্বীকার করে । আলেকজান্ডার তখন তার সহকারী কইনাস Coenus এর সাথে দেখা করার পরে ঠিক করেন ফিরে যাওয়াই ভাল ।

মৌর্য সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে উঠেছিল । মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য । এই সাম্রাজ্য অশোকের রাজত্বকালে দক্ষিণ এশিয়া,, পারস্য,,আফগানিস্তান অবধি বিস্তার লাভ করেছিল । পরবর্তীকালে শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্য মগধেই গড়ে ওঠে যা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তরাংশে এবং পারস্য ও আফগানিস্তানের কিছু অংশে বিস্তার লাভ করেছিল ।

মধ্য যুগের প্রথমাবস্থা গৌড় রাজ্য
বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন শশাঙ্ক যিনি ৬০৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন । সম্ভবত তিনি গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে একজন সামন্তরাজা ছিলেল । তিনি সম্ভবত হর্ষবর্ধন এর ভগিনী রাজ্যশ্রী কে অপহরন করে ছিলেল । এইজন্য হর্ষবর্ধন এর সঙ্গে তার যুদ্ধ হয় । এবং তার শক্তি বৃদ্ধি হতে দেখে কামরুপ রাজ ভাস্করবর্মন তার শত্রু হর্ষবর্ধন এর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন । ৬৩৭ খ্রীষ্টাব্দে শশাঙ্ক এর মৃত্যুর পর তার রাজ্যের পতন ঘটে এবং বাংলাতে এক অরাজক অবস্থার সৃস্টি হয় যাকে বাংলায় মাৎস্যন্যায় বলা হয় ।

৬৩৭ খ্রীষ্টাব্দে গৌড় রাজ শশাঙ্ক এর মৃত্যুর পর বাংলার ইতিহাসে একঘোরতর নৈরাজ্যের সৃস্টি হয় যা প্রায় দেড়শো বছর তা স্থায়ী হয় । এ সময় বাংলাতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের সৃস্টি হয় আত্মকলহ,,গৃহযুদ্ধ,,গুপ্তহ্ত্যা,,অত্যাচার প্রভৃতি চরমে ওঠে । এ সময় বাংলার সাধারণ দরিদ্র মানুষদের দুর্দশার আর শেষ ছিল না । স্থায়ী কোন প্রশাসন না থাকার কারনে বাহুবলই ছিল শেষ শক্তি ।

পাল বংশের সময় কাল
মাৎস্যন্যায়ের সময় বাংলার বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য বাংলার মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে গোপাল নামক এক সামন্তরাজা কে বাংলার রাজা হিসেবে গ্রহন করেন । গোপালই হলেন পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ।পাল বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী দুই রাজা ছিলেন ধর্মপাল রাজত্বকাল ৭৭৫ থেকে ৮১০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত,, এবং দেবপাল রাজত্বকাল ছিল ৮১০ থেকে ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ ।

ব্রিটিশ শাসন সময় দিনকাল
ব্রিটিশ শাসনের সময়ে দুটি মারাত্মক দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর বহুমানুষের জীবনহানি ঘটিয়েছিল । প্রথম দুর্ভিক্ষটি ঘটেছিল ১৭৭০ খ্রীষ্টাব্দে এবং দ্বিতীয়টি ঘটেছিল ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে । ১৭৭০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির রাজত্বকালে বাংলার দুর্ভিক্ষটি ছিল ইতিহাসের সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষগুলির মধ্যে একটি । বাংলার এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল ১৭৭০ এবং তার পরবর্তী বছরগুলিতে ।

১৮৫৭ খ্রীষ্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং বাংলা সরাসরি ভাবে ব্রিটিশ রাজবংশের শাসনাধীনে আসে ।

বাংলা ছিল খুব ভালো ধান উৎপাদক অঞ্চল এবং এখানে সূক্ষ সুতিবস্ত্র মসলিন তৈরি হত । এছাড়া এই অঞ্চল ছিল পৃথিবীর পাট চাহিদার মুখ্য যোগানকারী । ১৮৫০ সাল থেকেই বাংলায় ভারতের প্রধান শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠতে থাকে । এই শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছিল মূলত কলকাতার আশেপাশে এবং সদ্য গড়ে ওঠা শহরতলি এলাকায় । কিন্তু বাংলার বেশিরভাগ মানুষ তখনও কৃষির উপরেই বেশি নির্ভরশীল ছিলেন ।

ভারতের রাজনীতি এবং সংস্কৃতিতে বাংলার মানুষেরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করলেও বিশেষ করে পূর্ব বাংলায় তখনও খুব অনুন্নত জেলা ছিল । ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে রানী ভিক্টোরিয়া যখন ভারতের সম্রাজ্ঞী উপাধিতে নিজেকে ভূষিত করলেন তখন ব্রিটিশরা কলকাতাকে ব্রিটিশ রাজের রাজধানী বলে ঘোষনা করে ।

বাংলা নবজাগরণ বঙ্গভঙ্গ

১৯৪৭ সালের আগষ্ট মাসে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গণপ্রজাতন্ত্র ভারত এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ পায়। তখন বাংলা ভাগ হয়ে পশ্চিম বাংলা ভারতের একটি অংশ এবং পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত হয় ।

বাংলার স্বাধীন বৌদ্ধ ও হিন্দু নৃপতি পাল বংশদের রাজত্ব্য

প্রথম গোপাল ৭৫৬খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৭৮১ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
ধর্মপাল ৭৮১ থেকে ৮২১ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
দেবপাল ৮২১ থেকে ৮৬১ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
প্রথম বিগ্রহপাল, মহেন্দ্রপাল ও প্রথম শূরপাল ৮৬১ থেকে ৮৬৬ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
নারায়নপাল ৮৬৬ থেকে ৯২০খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
রাজ্যপাল ৯২০ থেকে ৯৫২ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
দ্বিতীয় গোপাল ৯৫২ থেকে ৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
দ্বিতীয় বিগ্রহপাল ৯৬৯ থেকে ৯৯৫ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
প্রথম মহীপাল ৯৯৫ থেকে ১০৪৩ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
নয়াপাল ১০৪৩ থেকে ১০৫৮ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
তৃতীয় বিগ্রহপাল ১০৫৮ থেকে ১০৭৫ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
দ্বিতীয় মহীপাল ১০৭৫ থেকে ১০৮০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
দ্বিতীয় শূরপাল ১০৭৫ থেকে ১০৭৭ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
রামপাল ১০৮২ থেকে ১১২৪ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
কুমারপাল ১১২৪ থেকে ১১২৯ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
মদনপাল ১১৪৩ থেকে ১১৬২ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
তৃতীয় গোপাল ১১২৯ থেকে ১১৪৩ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।

সেন বংশের রাজত্ব্য সময় কাল

হেমন্ত সেন ১০৯৭ খ্রীষ্টাব্দ ।
বিজয় সেন ১০৯৭ থেকে ১১৬০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
বল্লাল সেন ১১৬০ থেকে ১১৭৮ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
লক্ষ্মন সেন ১১৭৮ থেকে ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
বিশ্বরূপ সেন ১২০৬ থেকে ১২২০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
কেশব সেন ১২২০ থেকে ১২৫০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।

ইলিয়াস শাহী বংশের রাজত্ব্য প্রথম পর্ব

শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ ১৩৪২ থেকে ১৩৫৮ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত । । ১৩৪২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে পশ্চিম বাংলার লখনৌতি রাজ্যের সুলতান এবং ১৩৫২ খ্রীষ্টাব্দ থেকে পুরো বাংলায় রাজত্ব করেন ।
প্রথম সিকান্দর শাহ ১৩৫৮ থেকে ১৩৯০ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
গিয়াসুদ্দীন আজম শাহ ১৩৯০ থেকে ১৪১১ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
সাইফুদ্দীন হামজা শাহ ১৪১১ থেকে ১৪১৩ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
শিহাবুদ্দিন বায়াজিদ শাহ ১৪১৩ থেকে ১৪১৪ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত ।
প্রথম আলাউদ্দীন ফিরোজ শাহ ১৪১৪ থেকে ১৪১৫ খ্রীষ্টাব্দ পযন্ত

posted from Bloggeroid

বাংলাদেশকে একনজর দেখুন

বাংলাদেশকে একনজর দেখুন

সংক্ষেপে বাংলাদেশ
এক নজরে বাংলাদেশ
সরকারি নাম- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ (Peoples Republic of Bangladesh)
সরকার পদ্ধতি- সংসদীয় গণতন্ত্র/সরকার
সংসদ- এককক্ষ বিশিষ্ট
আয়তন- ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা- ১৬,১০,৮৩,৮০৪ (২০১২)
১৪,২৩,১৯,০০০ (প্রাথমিক জনসংখ্যা রিপোর্ট)
১৫,৭৯,০০,০০০ (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১)
রাজধানী- ঢাকা
মুদ্রা- টাকা
মোট সীমা- ৫,১৩৮ কিলোমিটার
গড় আয়ু- ৬০(৬০.২৫) বছর (৬৭.২ বছর; অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১)
স্বাক্ষরতার হার- ৫৬.৭% (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১)
মাথাপিছু আয়- ৮১৮ মার্কিন ডলার (অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১১)
স্থানীয় সময়- গ্রিনিচ সময়ের চেয়ে ৬ ঘণ্টা আগে (গ্রিনিচ +৬)
ধর্ম- মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, অন্যান্য
বিভাগ- ৭টি (সর্বশেষ বিভাগ- রংপুর)
জেলা- ৬৪টি
উপজেলা- ৪৮৩টি (সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মির্জাপুর, বর্তমান নাম বিজয়নগর)
* ৪৮৪ তম উপজেলা কুমিল্লার ভাঙ্গুরা
থানা- ৬০৩টি
ইউনিয়ন- ৪৪৮৫টি
গ্রাম- ৮৭৩১৯টি
সিটি কর্পোরেশন- ৮টি (সর্বশেষ- নারায়ণগঞ্জ, ৭ম; কুমিল্লা, ৮ম)


সর্ব উত্তরের জেলা- পঞ্চগড় (থানা- তেঁতুলিয়া)
সর্ব দক্ষিণের জেলা- কক্সবাজার (থানা- টেকনাফ)
সর্ব পশ্চিমের জেলা- চাঁপাই নবাবগঞ্জ (থানা- শিবগঞ্জ)
সর্ব পূর্বের জেলা- বান্দরবান (থানা- থানচি)
সর্ব দক্ষিণের স্থান- ছেঁড়া দ্বীপ (সেন্ট মার্টিন দ্বীপ)
আয়তনে সবচেয়ে বড় জেলা- রাঙামাটি
আয়তনে সবচেয়ে ছোট জেলা- মেহেরপুর
জনসংখ্যায় সবচেয়ে বড় জেলা- ঢাকা
জনসংখ্যায় সবচেয়ে ছোট জেলা- বান্দরবান

বৃহত্তম পাহাড়- গারো পাহাড় (ময়মনসিংহ জেলায়)
উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ- তাজিনডং বা বিজয় (বান্দরবান জেলায়)
বাংলাদেশের পাহাড়গুলো গঠিত- টারশিয়ারি যুগে
বাংলাদেশের উপর দিয়ে গেছে- কর্কটক্রান্তি রেখা (Tropic of Cancer)
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড- বঙ্গোপসাগরে

জাতীয় বিষয়াবলী
জাতীয় প্রতীক- উভয় পাশে ধানের শীষ বেষ্টিত পানিতে ভাসমান শাপলা; শাপলা ফুলের মাথায় পাটগাছের পরস্পর সংযুক্ত তিনটি পাতা; পাতার দুই পাশে দুটি করে তারকা বা তারা
জাতীয় প্রতীকের ডিজাইনার- কামরুল হাসান
জাতীয় পাখি- দোয়েল
জাতীয় ফুল- শাপলা
জাতীয় ফল- কাঁঠাল
জাতীয় পশু- রয়েল বেঙ্গল টাইগার
জাতীয় মাছ- ইলিশ
জাতীয় বন- সুন্দরবন
জাতীয় গাছ- আমগাছ
জাতীয় মসজিদ- বায়তুল মোকাররম (১৯৮২ সালে ঘোষণা করা হয়)
জাতীয় গ্রন্থাগার- গুলিস্তানে
জাতীয় যাদুঘর- শাহবাগে
জাতীয় উদ্যান- সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
জাতীয় বিমানবন্দর- শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (পুরাতন নাম- জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর)
জাতীয় খেলা- কাবাডি (হা-ডুডু)
জাতীয় কবি- কাজী নজরুল ইসলাম
জাতীয় শিশু পার্ক- শাহবাগ শিশু পার্ক
জাতীয় উৎসব- বাংলা নববর্ষ/বাংলা বর্ষবরণ
জাতীয় দিবস- ২৬ মার্চ (১৯৮০ সালে ঘোষণা করা হয়)
রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম- লালবৃত্তের মাঝে হলুদ মানচিত্র; তার উপরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং নিচে সরকার; উভয় পাশে ২টি করে মোট ৪টি তারা
রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামের ডিজাইনার- এ. এন. এ. সাহা

জাতীয় সঙ্গীত
জাতীয় সঙ্গীত- ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের প্রথম ১০ চরণ
গীতিকার ও সুরকার- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গাওয়া/বাজানো হয়- প্রথম ৪ চরণ
সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়- বঙ্গদর্শন পত্রিকায়
স্বরবিতান কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত
জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়- ৩ মার্চ, ১৯৭১, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে

রণ সঙ্গীত
রণ সঙ্গীত- ‘চল চল চল’ গানের প্রথম ২১ চরণ
গীতিকার ও সুরকার- কাজী নজরুল ইসলাম
রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গাওয়া/বাজানো হয়- প্রথম ২১ চরণ
প্রথম প্রকাশিত হয়- শিখা পত্রিকায়
প্রথম প্রকাশিত হয়- ‘নতুনের গান’ নামে
সন্ধ্যা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত

জাতীয় পতাকা
ডিজাইন- গাঢ় সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত
ডিজাইনার- কামরুল হাসান
মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের প্রথম পতাকার ডিজাইনার- শিব নারায়ণ দাশ
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত- ১০:৬ বা ৫:৩
লাল বৃত্তের মাপ- পতাকার ৫ ভাগের ১ ভাগ (১/৫ অংশ)
পতাকা দিবস- ২ মার্চ
প্রথম উত্তোলন করেন- আ স ম আব্দুর রব (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়)
বিদেশে প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন- ভারতের কলকাতায়, বাংলাদেশ মিশনে
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সঙ্গে মিল আছে- জাপানের পতাকার

প্রথম বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকেন- মেজর জেমস রেনেল (বাংলার তথা ভারতবর্ষের প্রথম সার্ভেয়ার)

posted from Bloggeroid

সিলেট জেলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস দেখুন

সিলেট জেলার ঐতিহ্য ও ইতিহাস দেখুন

সিলেট জেলার ঐতিহ্য
সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.)

হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। তিনি ছিলেন ওলিকুল শিরোমণি। সিলেট অঞ্চলে তার মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে। সিলেটের প্রথম মুসলমান শেখ বোরহান উদ্দিন (র.) এর ওপর রাজা গৌড়গোবিন্দের অত্যাচার এবং এর প্রেক্ষিতে হযরত শাহজালাল (র.) ও তাঁর সফরসঙ্গী ৩৬০ আউলিয়ার সিলেট আগমন ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ কারণে সিলেটকে ৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয়। কেউ কেউ সিলেটকে পূণ্যভূমি অভিধায়ও অভিহিত করেন।

আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল

কথিত আছে, প্রাচ্যদেশে আসার পূর্বে শাহজালাল (র.) এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (র.) তাঁকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’

হযরত শাহজালাল (র.) বিশিষ্ট শিষ্য শেখ আলীকে এই মাটির দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, যাত্রাপথে বিভিন্ন জনপদের মাটির সাথে যেন এই জনপদের মাটির তুলনা করে তিনি দেখেন। পরে এই শিষ্যের উপাধি হয় চাষণী পীর। সিলেট শহরের গোয়াইপাড়ায় তাঁর মাজার বিদ্যমান।

সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় হযরত শাহজালাল (র.) সিলেটে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। সিলেটে তেল ও গ্যাস পাওয়ায় আরবের মাটি ও সিলেটের মাটির মিল প্রমাণিত হয়েছে।

গজার মাছ

হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার চত্বরের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। এসব মাছকে পবিত্র জ্ঞান করে দর্শনার্থীরা ছোট ছোট মাছ খেতে দেয়। পুকুরের পশ্চিম কোণে ছোট মাছ বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। পুকুরে অজুর ব্যবস্থাও আছে। ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিষ প্রয়োগে পুকুরের প্রায় ৭শ’রও বেশি গজার মাছ হত্যা করা হয়। ফলে পুকুরটি গজার মাছ শূন্য হয়ে পড়ে। মরে যাওয়া মাছগুলোকে মসজিদের পশ্চিম দিকের গোরস্থানে পুঁতে ফেলা হয়। পুকুরটি মাছ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর হযরত শাহজালাল (র.) এর অপর সফরসঙ্গী মৌলভীবাজারের শাহ মোস্তফার (র.) মাজার থেকে ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি ২৪ টি গজার মাছ এনে পুকুরে ছাড়া হয়। বর্তমানে পুকুরের গজার মাছের সংখ্যা কয়েক শ'তে দাঁড়িয়েছে বলে জানা যায়।

জালালী কবুতর ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়া

হযরত শাহজালাল (র.) এর আধ্যাত্নিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া(র.) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর বা জালালী কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং জালালী কবুতর নামে খ্যাত। সিলেটে জাতিধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে কেউই এ কবুতর বধ করে না এবং খায় না। বরং অধিবাসীরা এদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে থাকে। শাহজালালের (র.) মাজার এলাকায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। মাজার কর্তৃপক্ষ এসব কবুতরের খাবার সরবরাহ করে থাকেন।

রাজস্বমুক্ত কসবে সিলেট

হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন কামনাবাসনামুক্ত নির্লোভ সূফি সাধক। কথিত আছে, দিলস্নীর সম্রাট তাঁকে নবাবী প্রদান করে একটি সনদ পাঠান। হযরত শাহজালাল (র.) তা প্রত্যাখ্যান করেন এই বলে যে, তিনি সংসারবিরাগী ফকির, তাঁর নবাবীর প্রয়োজন নেই। এক পর্যায়ে সম্রাট তাঁকে সিলেটের জায়গীর গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। হযরত শাহজালাল (র.) তাতেও রাজি হননি।

শেষে সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি হযরত শাহজালালের (র.) প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে সিলেট শহরকে রাজস্বমুক্ত (কসবে) বলে ঘোষণা দেন। এ কারণে আজো সিলেট শহরের ভূমি রাজস্ব থেকে মুক্ত।

জমজমের কূপ ও ঝরণা

লোকশ্রম্নতি আছে যে হযরত শাহজালাল (র.) একটি কূপ খনন করার আদেশ দিয়ে প্রার্থনা করেন আলস্নাহ যেন এই কূপটিকে জমজমের কূপটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেন। এরপর তিনি লাঠি দিয়ে মাটির ওপর আঘাত করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে এই কূপটির সাথে জমজমের কূপের মিলন ঘটে গেল। তারপর এর চারপাশ পাকা করে দেওয়া হলো এবং উত্তর পার্শ্বে দুটি পাথর বসিয়ে দেওয়া হলো-যা থেকে দিনরাত পানি প্রবাহিত হয়।

ডেকচি

মাজারের পূর্ব দিকে একতলা ঘরের ভেতরে বড় তিনটি ডেকচি রয়েছে। এগুলো ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছেন বলে জানা যায়। মীর মুরাদ ঢাকার হোসেনী দালান তৈরী করেন। যদিও ডেকচিগুলোতে রান্নাবান্না হয় না, তবুও কথিত আছে প্রত্যেকটিতে সাতটি গরম্নর মাংস ও সাত মণ চাল এক সাথে রান্না করা যায়। পূণ্যের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ডেকচিগুলোতে প্রচুর টাকাপয়সা দান করেন।

চিলস্নাখানা

মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রীলঘেরা তারকাখচিত ছোট্ট যে ঘরটি রয়েছে, এটি হযরত শাহজালালের (র.) চিলস্নাখানা। স্থানটি মাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে যে, হযরত শাহজালাল (র.) এই চিলস্নাখানায় জীবনের ২৩ টি বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন।

শাহজালালের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি

হযরত শাহজালাল (র.) কেবল একজন পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বীর মোজাহিদ। তার ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম, প্লেট এবং বাটি দর্শনার্থীদের দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। দরগার দক্ষিণ দিকে দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে একটি প্রবেশ পথ রয়েছে। এই পথ দিয়ে অগ্রসর হওয়ার পর বাঁ দিকের বাড়িটি মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের। এই বাড়িতে হযরত শাহজালালের (র.) তলোয়ার ও খড়ম সংরক্ষিত আছে। প্লেট ও বাটি সংরক্ষিত আছে দরগাহ’র মোতওয়ালিস্নর বাড়িতে। এগুলো দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষের ভীড় জমে।

দরগাহ মসজিদ

বাংলার সুলতান আবু মুজাফ্ফর ইউসুফ শাহের মন্ত্রী মজলিশে আতার আমলে ১৪০০ সালে দরগাহ চত্বরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। ১৭৪৪ সালে বাহরাম খাঁ ফৌজদারের সময় এটি পুনর্নির্মিত হয়। বর্তমানে এটি সিলেট শহরের অন্যতম একটি মসজিদ।

হযরত শাহজালালের (র.) সিলেট আগমন

হযরত শাহজালাল (র.) আরবের ইয়েমেনের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর পিতা মাহমুদ বিন মোহাম্মদ ছিলেন কোরায়শ বংশের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁকে পীরদের পীর হিসেবে অভিহিত করা হতো। তিনি বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হন। তাঁর মা ছিলেন সৈয়দ বংশের এক মহীয়সী নারী। শাহজালালের (র.) বয়স তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। মায়ের মৃত্যুরপর মামা সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দী তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে লালনপালন করেন। তিনি ভাগ্নেকে এমনভাবে বড় করতে চান যাতে তিনি পা--ত্য ও বৈদগ্ধের স্তরে গিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন। ধীরে ধীরে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা প্রকাশ পেতে থাকে।

কথিত রয়েছে, একদিন সৈয়দ আহমদ কবির তাঁর নিজ গৃহের ভেতর থেকে এক মুঠো মাটি নিয়ে এসে হযরত শাহজালালের (র.) হাতে দিয়ে বললেন, ভারতবর্ষের দিকে বেরিয়ে পড়ো এবং যে মাটির সাথে এ মাটির রূপ-রস-ঘ্রাণের সাদৃশ্য খুঁজে পাবে সেখানে এই মাটি ছড়িয়ে দিয়ে আস্তানা গাড়বে। শাহজালাল (র.) তাঁর পীরের কথা অনুযায়ী হাজী ইউসুফ ও হাজী খলিলসহ আরো কিছু শিষ্য নিয়ে ভারতবর্ষের দিকে রওয়ানা হলেন। প্রথমে তিনি নিজ বাসভুমি ইয়েমেনে এসে পৌঁছেন। এসময় ইয়েমেনে এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন। তিনি বিষপানে হযরত শাহজালালকে (র.) বধ করার চেষ্টা চালান। কিন্তু হযরত শাহজালালের (র.) কৌশলের কাছে রাজার দুরভিসন্ধি পরাজিত হয়। রাজার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শেখ আলি ক্ষমতায় অভিষিক্ত হন। শেখ আলি হযরত শাহজালালের (র.) গুণ ও কোমলমতির পরিচয় পেয়ে তাঁর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তিনি হযরত শাহজালালের (র.) সফরসঙ্গী হলেন। হযরত শাহজালাল (র.) তাঁর পীরের দেওয়া মাটি শেখ আলির হাতে দিয়ে বললেন, আমরা যখন যেখানে গিয়ে পৌঁছাব, সেখানকার মাটির সঙ্গে এ মাটির রূপ-রস-গন্ধ তোমাকে মিলিয়ে দেখতে হবে- এটাই হল তোমার কাজ। শেখ আলিকে জিহবা দিয়ে চুষে মাটি নিরীক্ষণ করতে হতো। সে কারণে আজো তাঁকে চাষণির পীর হিসেবে অভিহিত করা হয়।

হযরত শাহজালাল (র.) যখন দিলস্নীতে পৌঁছান, তখন সেখানকার বিখ্যাত পীর ছিলেন নিজাম উদ্দিন আউলিয়া। তিনি প্রকৃত অর্থেই অনুধাবন করতে পারলেন হযরত শাহজালাল (র.) একজন দরবেশ। তিনি ছাই রঙের এক জোড়া কবুতর উপহার হিসেবে পাঠিয়ে তাঁকে তার দরবারে নিমন্ত্রণ জানালেন।

হযরত শাহজালাল (র.) যখন সিলেটে আসেন-তখন এখানে গোবিন্দ নামক এক রাজার রাজত্ব ছিল। এ রাজ্য জাদুটোনার জন্য বিখ্যাত ছিল। রাজা গোবিন্দের জন্মস্থান গৌড়ে থাকায় তাকে গৌড়গোবিন্দ নামে ডাকা হতো। হযরত শাহজালাল (র.) ও তাঁর সঙ্গীরা যখন গৌড় রাজ্য অধিকার করেন-তখন রাজা গৌড় ছেড়ে সিলেটে আশ্রয় নেন এবং নিজেকে রাজা বলে দাবি করতে থাকেন। ওই সময় সিলেট শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত টুলটিকর নামক স্থানে শেখ বোরহান উদ্দিন নামক একজন মুসলমান থাকতেন। বোরহান উদ্দিন ছিলেন নিঃসমত্মান। আলস্নাহর কাছে অনেক প্রার্থনার পর তিনি একটি পুত্র সমত্মান লাভ করলেন। তাঁর সমত্মানের আকিকা উপলক্ষে তিনি একটি গরম্ন কুরবানি দেন। এসময় একটি কাক অথবা একটি চিল এক টুকরো মাংস তুলে নিয়ে গৌড়গোবিন্দের গৃহপ্রাঙ্গণে ফেলে দিল। কুসংস্কার আশ্রিত রাজা ভীষণ রাগান্বিত হলেন। তিনি বোরহান উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে তাঁর হাতের কব্জি কেটে দিলেন এবং তার নিষ্পাপ শিশুকে জবাই করে হত্যা করলেন। এতে বোরহান উদ্দিন নিরূপায় হয়ে পড়লেন। তাঁর মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলতে থাকে। একদিন বোরহান উদ্দিন গোপনে শহর ছেড়ে দিলস্নীর সুলতান আলাউদ্দিন ইবনে মাহমুদ শাহের দরবারে গিয়ে হাজির হলেন। তিনি সুলতানের কাছে তাঁর ওপর ঘটে যাওয়া অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করলেন। সুলতান এ মর্ম পীড়াদায়ক কাহিনী শুনে ভীষণ আঘাত পেলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বোরহান উদ্দিনের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাঁর ভাতিজা সিকন্দর শাহকে সসৈন্যে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। সিকন্দর গাজি ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে সোনারগাঁয়ে আস্তানা গাঁড়লেন। খবর পেয়ে গৌড়গোবিন্দ তার জাদুকরদের ভৌতিক শক্তির সাহায্যে সিকন্দর গাজির সৈন্যদের ওপর জাদুমিশ্রিত অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সিকন্দর গাজির সৈন্যরা পরাস্ত হয়। এরপর ঘটনাক্রমে শাহজালালের (র.) সাথে দেখা হয় সিকন্দর গাজির। তখন তাঁদের সৈন্য সংখ্যা তিন শত ষাট-এ গিয়ে দাঁড়াল। সিকন্দর গাজি তার সকল কথা শাহজালালকে (র.) সবিস্তারে জানালেন। তিনি তাঁর কথা শুনে বললেন, ‘আমিও এসেছি সকল অপশক্তি ধ্বংস করে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে, তাই তুমি যদি সিলেট-বিজয় করতে চাও তাহলে আমার সঙ্গে আসতে পার।’

হযরত শাহজালাল (র.) যোদ্ধাগণকে সঙ্গে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। ব্রহ্মপুত্রের তীরে পৌঁছে দেখলেন এখানে কোনো নৌকা নেই। তিনি তার মুসালস্না(জায়নামাজ) বিছিয়ে দিয়ে সকলকে নিয়ে নদী পার হন বলে লোকশ্রম্নতি রয়েছে। তাঁরা যখন সিলেটের চৌকি পরগনায় পৌঁছলেন, তখন গৌড়গোবিন্দের সৈন্যরা তাঁর প্রতি অগ্নিবাণ ছুঁড়তে লাগল। কিন্তু হযরত শাহজালাল (র.) তাঁর অলৌকিক ক্ষমতায় তা প্রতিহত করলেন, যা ফিরে গিয়ে গৌড়গোবিন্দের আস্তানায় অন্ধকার জালের সৃষ্টি করল। এ দৃশ্য দেখে সৈন্যরা ঘাবড়ে গেল। এ খবর শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন গৌড়গোবিন্দ নিজেও। এ অবস্থায় হযরত শাহজালাল (র.) বরাক নদীর তীরে এসে পৌঁছলেন। কিন্তু এখানেও পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবারও তিনি জায়নামাজ বিছিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে নদী পার হন বলে লোকশ্রম্নতি আছে। তারপর সিলেট শহরের দক্ষিণ দিকে জালালপুর পরগণায় এসে পৌঁছেন। এসময় গৌড়গোবিন্দ একটি বিশাল লোহার কামান হাতির ওপর সওয়ার করে শাহজালালের কাছে পাঠালেন। রাজার দূতরা জানাল, তিনি যদি ধনুতে শরযোজনা করতে পারেন, তাহলে তিনি তার জাদুটোনা থেকে বিরত থাকবেন এবং বিনাযুদ্ধে রাজ্যভার ছেড়ে দেবেন। শাহজালাল (র.) তার শর্ত মেনে নেন। এরপর হযরত শাহজালাল (র.) তাঁর সফরসঙ্গী নাসিরউদ্দিনকে ধনুতে শরযোজনা করতে বললেন। কিন্তু তা খুবই কষ্টকর ছিল। নাসিরউদ্দিনের এ অবস্থা দেখে হযরত শাহজালাল (র.) তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা তাঁকে সহযোগিতা করেন। সঙ্গে সঙ্গে নাসিরউদ্দিন সফল হন। এই অসাধ্য সাধন দেখে চারদিক থেকে হর্ষধ্বনি ওঠে এবং আকাশবাতাস প্রকম্পিত হয়। এরপর কামানটি গৌড়গোবিন্দের দিকে এগিয়ে আসে। কোনোক্রমে রাজা পলায়নের উদ্দেশ্যে কাছাড়ের পথ ধরলেন। এরপর থেকে তার আর কোনো হদিস মেলেনি।

হযরত শাহজালাল (র.) এখানে রাজ্য জয় করে দেখেন তাঁর পীর সৈয়দ আহমদ কবিরের দেওয়া এক মুঠো মাটির সাথে এখানকার মাটির অদ্ভূত মিল রয়েছে। তিনি সিলেট শহরের দরগা মহলস্নায় একটি ছোট্ট টিলায় তাঁর আস্তানা গাড়লেন। এখানে বসেই এবাদত-বন্দেগি করতে থাকেন। তিনি তাঁর সঙ্গীদেরকে শহরের বিভিন্ন স্থানে, পরগণায় ইসলাম প্রচারের জন্য পাঠিয়ে দেন। শুধু ইয়েমেনের রাজপুত্র, হাজি ইউসুফ ও হাজী খলিলসহ আরো কয়েকজন খাদেমকে তাঁর কাছাকাছি রাখেন বলে জানা যায়। এখান থেকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন এবং নিজের আস্তানাকে ধ্যান ও সাধনার এক অনুপম লীলাক্ষেত্রে পরিণত করেন। হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন কিংবদমিত্মতুল্য। জাতিধম,র্ বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আধ্যাত্নিক শক্তি যোগাচ্ছেন এই সাধক পুরম্নষ।

বাংলা ভাষায় লেখা সিলেট অঞ্চলের প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ ‘শ্রীহট্ট দর্পণ’-এ বলা হয়েছে-হযরত শাহজালাল (র.) যে ছোট্ট টিলায় বাস করতেন, মৃত্যুর পর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। দাফনের পর তাঁর কবরের চারপাশে ছোট্ট দেওয়াল তোলা হয়। পাশেই বানানো হয় একটি মসজিদ।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্নিক পুরম্নষ হযরত শাহজালাল (র.) ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেটে আগমন করেন। তিনি ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে ৬৯ বছর বয়সে ইমেত্মকাল করেন। তিনি ছিলেন চিরকুমার। এজন্যই হযরত শাহজালালকে (র.) বলা হতো মজররদ।



হযরত শাহপরাণ (র.) মাজার শরীফ:

তাপসকুল শিরোমণি হযরত শাহ্পরাণ (র.) শায়িত আছেন সিলেটের খাদিমপাড়ায়। সিলেট শহরের প্রায় ৮ কি. মি. পূর্ব দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কথেকে প্রায় ০.৩ কি. মি. ভিতরে সু-উচ্চ ও মনোরম টিলায় অবস্থিত হযরত শাহ্পরাণ (র.)-এর মসজিদ ও দরগাহ্। মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে সমাধিটি।



মহাপ্রভূ শ্রী চৈতন্যদেবের বাড়ী:

বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যদেবের পূর্বপুরম্নষের বাড়ী তাঁরই নামে খ্যাত মন্দির। তেরো ধাপ সিড়ি ভেঙে উপরে উঠলে মন্দিরপ্রাঙ্গণ। প্রথমেই সিংহদ্বার। বামদিকে পাশাপাশি পাঁচটি ছোট মন্দির। এগুলোর নাম হল- নাট মন্দির, দোল মন্দির, রাম মন্দির, শ্রীমন্দির আর ভোগ মন্দির। এখানে দোল মন্দিরই মূল মন্দির। পঞ্চদশ শতাব্দীতে শ্রীচৈতন্য ছিলেন বাংলার একজন সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি ২৫ বছর বয়সকালে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন। জাতিভেদ প্রথার বিরম্নদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেন। শ্রীকৃষ্ণের মানবিগ্রহ হিসেবে লাখ লাখ লোকের দ্বারা তিনি পূজিত হন। বাংলার ঘরে ঘরে তাঁর নাম প্রচার হয়। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির লোককে তিনি ভাইয়ের মতো আলিঙ্গন করে গেছেন। তাঁর কিছু কিছু শেস্নাক মন্দিরের গায়ে লেখা হয়েছে। এমন একটি হল: ‘মানুষ মানুষের ভাই’। ৮৯১ বঙ্গাব্দের ২৩ ফা-ুন পূর্ণিমা তিথিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে নাম রাখা হলো বিশ্বম্ভর। ওর মা ডাকতেন ‘নিমাই’ বলে। একসময়ে গৃহত্যাগ করে তিনি সন্ন্যাসী হন।



প্রকৃতি কন্যা জাফলং

প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের জাফলং। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদের দারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিক স্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমন পিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট ভ্রমনে এসে জাফলং না গেলে ভ্রমনই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।

সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান। জাফলংয়ে শীত ও বর্ষা মওসুমের সৌন্দর্যের রুপ ভিন্ন। বর্ষায় জাফলং এর রুপ লাবণ্য যেন ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। ধূলি ধূসরিত পরিবেশ হয়ে উঠে স্বচ্ছ। স্নিগ্ধ পরিবেশে শ্বাস-নি:শ্বাসে থাকে ফুরফুরে ভাব। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজাভ চূড়ায় তুলার মত মেঘরাজির বিচরণ এবং যখন-তখন অঝোরধারায় বৃষ্টি পাহাড়ি পথ হয়ে উঠে বিপদ সংকুল-সে যেন এক ভিন্ন শিহরণ। সেই সঙ্গে কয়েক হাজার ফুট উপর থেকে নেমে আসা সফেদ ঝর্ণাধারার দৃশ্য যে কারোরই নয়ন জুড়ায়।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, হাজার বছর ধরে জাফলং ছিল খাসিয়া জৈন্তা-রাজার অধীন নির্জন বনভূমি। ১৯৫৪ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর খাসিয়া জৈন্তা রাজ্যের অবসান ঘটে। তারপরও বেশ কয়েক বছর জাফলংয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল পতিত পড়ে রয়েছিল। ব্যবসায়ীরা পাথরের সন্ধানে নৌ পথে জাফলং আসতে শুরু করেন। পাথর ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকায় গড়ে উঠে নতুন জনবসতিও। আশির দশকে সিলেটের সাথে জাফলং এর ৫৫ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পাশাপাশি প্রকৃতিপ্রেমীরাও ভিড় করতে থাকেন জাফলংয়ে। জাফলং এখন দেশের সেরা পর্যটন স্পট।

সিলেট থেকে যাতায়াত

সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিএনজি চালিত অটোরিক্স্রায় যেতে পারেন জাফলং এ। সময় লাগবে ১ ঘন্টা হতে ১.৩০ ঘন্টা।

ভাড়াঃ বাস -জনপ্রতি ৫৫ টাকা

মাইক্রোবাস- ১৭০০-২০০০/-টাকা

সি এন জি চালিত অটো রিক্স্রাঃ ৭০০/ টাকা।



জিতু মিয়ার বাড়ী

চাদঁনী ঘাটের সিড়িঁ/ আলী আমজাদের ঘড়ি/ বন্ধু বাবুর দাড়ি/ আর জিতু মিয়ার বাড়ি সিলেটের পরিচিতিতে বহুল প্রচলিত এমন লোকগাঁথা। সিলেট নগরীর শেখঘাটে কাজীর বাজারের দক্ষিণ সড়কের ধারে ১ দশমিক ৩৬৫ একর ভুমি জুড়ে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জিতু মিয়ার বাড়ি। চুন সুরকি দিয়ে নির্মিত মুসলিম স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন এ দালানটি নির্মাণ খান বাহাদুর আবু নছর মোহাম্মদ এহিয়া ওরফে জিতু মিয়া। ১৯৯১ সালে এ বাড়ির সামনের দালানটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমান কাজিরবাজার গরুর হাট ছিল কাজিদের মূল বাড়ি। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে বাড়িটি লন্ডভন্ড হয়ে গেলে বর্তমানে জায়গায় বাড়িটি স্থানান্তরিত হয়। খাঁন বাহাদুর জিতু মিয়ার প্রথম স্ত্রী ছিলেন তার চাচা মাওলানা আব্দুল রহমানের মেয়ে সারা খাতুন। সারা খাতুনের অকাল মৃত্যুতে ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা রসুল বক্সের মেয়েকে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ স্ত্রীও অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের ঘরে কোনো সন্তান সন্তনি ছিল না। তবে পরবর্তীতে জিতু মিয়ার ৫টি বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়।

সে সব স্ত্রীর ঘরে তার বহু সন্তান সন্ততি রয়েছে। কিন্তু দুরদর্শী জিতু মিয়া তার জমিদারি ও বিশেষ করে আলীশান বাড়িটির অস্তিত্ব চিরদিন অক্ষত রাখান লক্ষ্যে মৃত্যুর আগে ১৯২৪ সালে নিজেকে নিঃসন্তান উল্লেখ করে তৎকালীন আসাম সরকারের অনুমোদন নিয়ে তারঁ যাবতীয় সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। কে বি এহিয়া ওয়াকফ এস্টেট নামে এস্টেট এর মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। পরবর্তীতে সিলেট বিভাগে উন্নীত হলে বিভাগীয় কমিশনার পদাধিকার বলে এ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হন।

ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, মৌলভী আবু নছর মোহাম্মদ ইদ্রিছ কাজী হয়ে সিলেট আসেন নবাবী আমলে। সুরমা নদীর তীরে তারঁ বিচারালয়কে কেন্দ্র করে তৎকালীন সময়ে গড়ে উঠে একটি গঞ্জ। লোকজন একে খানবাহাদুর গঞ্জ বাজার বলে ডাকতো। তার মৃত্যু পর তার পুত্র মাওলানা আবু মোহাম্মদ আবদুর কাদির ও মাওলানা আবুল হোসাইন মোহাম্মদ আব্দুর রহমান তাদের বিশাল জায়গীরকে কেন্দ্র করে জমিদারি এস্টেট গড়ে তোলেন।



ক্বীনব্রীজ

সিলেট নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্বীন ব্রীজের নামটি বেশ গর্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। সিলেটের প্রবেশদ্বার সিলেটের কীন ব্রীজ । সুরমা নদীর ওপর স্থির দাঁড়িয়ে এই ব্রীজ পথচারীদের জানান দেয় যুগ যুগান্তরের নানা রঙের ইতিহাসের। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর এ অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সাম্প্রতিক কালে সংস্কার করা হয়েছে ফলে আরো রঙে ,আরো সাজে সেজেছে ক্বীন ব্রীজ।

ইতিহাস থেকে ব্রীজটি সম্পর্কে নানা কথা জানা গেছে। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। এর আকৃতি ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট। প্রস্থ ১৮ ফুট। ব্রীজ নির্মাণে তখনকার দিনেই ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রীজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশ কংক্রীট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন।

ব্রীজটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় জমান।

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ ।



আলী আমজাদের ঘড়ি

ঐতিহাসিক তথ্য মতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিম পাশার জমিদার আলী আমজাদ ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলার সুরমা নদীর তীরবর্তী স্থানে এই অনন্য সুন্দর স্থাপনাটি তৈরী করেন। তাঁর নাম অনুসারে এটিকে আলী আমজাদ এর ঘড়ি হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের সাথে একত্রীভুক্ত হয়। তখন এই নিয়ে সিলেটে তীব্র প্রতিবাদ হয়। সিলেটের জনগণকে শান্ত করার জন্য তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রম্নক সিলেট সফর করেন এবং বড়লাটের সফর উপলক্ষে এবং স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধার্থে জমিদার আলী আমজাদের নিজ তহবিল হতে এই ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়।

প্রায় ১৪০ বছর যাবৎ উক্তটি ঘড়িটি আলী আমজাদের স্মৃতি বহন করে আসছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের উদ্যোগে ঘড়িটি আধুনিকায়ন ও মেরামত করা হয়। এটি সিলেট জেলার একটি অন্যতম পর্যটন আকষর্ণীয় স্থান। দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক এই ঘড়িটি একনজরে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়।

অবস্থান:সিলেট সার্কিট হাউজ ও ক্বিন ব্রিজ সংলগ্ন।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঐতিহাসিক আলী আমজাদ ঘড়িটির অবস্থান।

ঘড়িঘরের পরিমাপ:দৈর্ঘ্য: ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি ; প্রস্থ: ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি; নীচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা: ১৩ ফুট; ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা: ৭ ফুট ; ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা : ৬ ফুট ; মোট উচ্চতা : ২৬ ফুট।



সিলেট মণিপুরি মিউজিয়াম

ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা উপকরণে সমৃদ্ধ সিলেট মণিপুরি মিউজিয়াম। এতে রয়েছে কয়েক শ’ বছরের পুরনো ঘন্টা, যুদ্ধে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জিনিসপত্র এবং মণিপুরীদের তৈরী হ্যান্ডলুম। মণিপুরিদের কৃষ্টি-কালচারকে তুলে ধরাই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।

সুবিদবাজারে ভাড়া করা বাড়িতে মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মিউজিয়ামটির জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা খোজা হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক হারুনুর রশীদ খান মিউজিয়ামটির জন্য স্থায়ী ভূমি বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন।

বৃহত্তর সিলেটে প্রায় সোয়া লাখ মণিপুরি রয়েছে। সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এবং সুনামগঞ্জের ছাতকে এ সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসাবে পরিচিত। মণিপুরিদের তৈরী হস্তশিল্প খুবই জনপ্রিয়।মণিপুরিদের সংস্কৃতি খুবই বৈচিত্রময়।
তাদের বড় উৎসব হচ্ছে রাস পূর্ণিমা। এ পূর্ণিমাকে ঘিরে প্রতিবছর মণিপুরিদের মিলনমেলা বসে। মণিপুরিদের সংস্কৃতিকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে নব প্রতিষ্ঠিত মিউজিয়ামটি অবদান রাখবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।



মনিপুরী রাজবাড়ী

মনিপুরী সিলেট তথা বাংলাদেশের আদি সম্প্রদায়ের অন্যতম জনগোষ্ঠি। নগর সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে অবস্থিত মনিপুরী রাজবাড়ী প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন। এ ভবনের নির্মাণ শৈলী সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিং এর স্মৃতিধন্য এ বাড়িটি আজ অবহেলিত ও বিলীন প্রায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। বাড়ীর সুপ্রাচীন প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, মনোহর কারুকাজের সিড়ি ও বালাখাঁনার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মনীপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল। এখনও ধ্বংস স্ত্তপের মতো টিকে থাকা স্থাপনাটি এ বাড়ীসহ সিলেটে বসবাসরত মনিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির স্থান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মনিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিং, মার্জিত সিং ও গম্ভীর সিং রাজবাড়ীটি তৈরী করে এখানে বসবাস করেন। পরে চৌর্জিৎ সিং ও মার্জিত সিং কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় বসতী স্থাপন করলেওরাজা গম্ভীর সিং থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। ১৮২৬ সালে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতায় বার্মার সাথে যুদ্ধ করে মনিপুর রাজ্য পুরুদ্ধারের আগ পর্যন্ত রাজা গম্ভীর সিং সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন। ইতিহাসে মনিপুরীদের কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয় ১৮১৯-১৮২৬ সাল পর্যন্ত । ১৮২২ সালে মনিপুরী রাজ্যের সাথে বার্মার যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। অসংখ্য মনিপুরী পরিবার নিজ আবাসভূমি ছেড়ে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজা চৌর্জিৎ সিংও কাছাড়ে পালিয়ে যান। রাজ্যভার গ্রহণ করেন তার সহোদর মার্জিত সিং। এক পর্যায়ে মার্জিত সিং বার্মিজদের কাছে পরাস্থ হন। পরিশেষে চৌর্জিৎ , মার্জিত ও গম্ভীর তিন ভাই একত্রে পুনরায় চলে আসেন মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীতে। তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ শাসকদের আশ্রয়ে এখানেই বসতী স্থাপন করেন। বৃটিশ সরকারের অনুরোধে সিলেটে সশস্ত্র খাসিয়াদের দমনে মনিপুরী লেভী (সৈন্যবাহিনী) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদিকে, সিলেটে দীর্ঘদিন অবস্থানের সুবাদে মনিপুরিদের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা দিক এ অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা এখনো প্রতীয়মান হয় মনিপুরী নৃত্য, গান ও পোষাক ছাড়াও সিলেটের কৃষ্টি সংস্কৃতিতে।

মনিপুরী সম্প্রদায়ের ইতিহাস-আবেগ-অনুভূতির অন্যতম স্থান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীর সংস্কারের জন্য আজ অবধি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। রাজা কতৃক নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশের কোন অস্তিত্ব নেই। উপরন্তু রাজবাড়ীর সামনে অপরিকল্পিত ভাবে মন্দির নির্মান করে রাজবাড়ীর পুরাকীর্তি ঢেকে রাখা হয়েছে।

বর্তমানে মনিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন এ রাজবাড়ীতে। পূর্বসুরী রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্ত্তকে স্বর্ণালী স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একমণ ওজনের মন্দিরের একটি ঘন্টা যার গায়ে মনিপুরী ভাষায় লেখা আছে,‘‘শ্রীহট্ট কুনোঙ্গী শ্রী মহাপ্রভুদা শ্রীলশ্রী পঞ্চযুক্ত মনিপুরে স্বরচন্দ কীর্ত্তি সিংহ মহারাজন্য কৎখিবী সরিকনি ইতিশকাব্দা ১৮০০ তারিখ ১৮ জৈষ্ঠ্য’’।

মনিপুরী সংস্কৃতি সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যেরই অংশ । দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে এই সুপ্রাচীন, ঐতিহাসিক রাজবাড়ির সংস্কার ও পুরাকীর্ত্তির সংরক্ষনে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।



মিউজিয়াম অব রাজাস’

মরমী কবি হাছন রাজা ও পরিবারের অন্য সদস্যদেও স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সিলেট নগরীর প্রানকেন্দ্র জিন্দাবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে একটি যাদুঘর। এর নাম দেওয়া হয়েছে মিউজিয়াম অব রাজাস’। এখানে দেশ বিদেশের দর্শনার্থীরা হাছন রাজা ও তার পরিবার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে প্রতিদিন ভিড় করছেন।

মিউজিয়ামে দেওয়ান হাছন রাজা ও দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরীর মূল্যবান ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও গানের পান্ডুলিপি শোভা পাচ্ছে। প্রবেশদ্বারে রয়েছে হাছন রাজার বাড়ির ধ্বংসাবশেষের একটি পিলার। মিউজিয়ামটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে-পবিত্র কোরআন শরীফের ছোট আকারের একটি কপি। কোরআন শরীফটির সাইজ হচ্ছে-পৌণে এক ইঞ্চি বাই এক ইঞ্চি। এখানে শোভা পাচ্ছে-হাছন রাজার ঘোড়ার বেল্ট, তাঁর জন্মস্থান ও জমিদারী এলাকা থেকে সংগৃহীত ইট, রাজার পোষা কুড়া পাখি ও হাতির নামের তালিকা, তার ব্যবহৃত শ্বেত পাথর ও রুপার তৈজস পত্র, হাছন রাজার ওপর নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়া ছবিতে ব্যবহৃত পোষাক ও ছবির সিডি, তার স্ত্রীর ব্যবহার্য জিনিসপত্র, দেওয়ান একলিমুর রাজার ব্যবহৃত চেয়ার, তার স্ত্রীর ব্যবহার্য সোনার তারের ও রুপার তারের তৈরী পোষাক, তার ব্যবহৃত হিসাবের খাতা, বৃটিশ সরকার প্রদত্ত খান বাহাদুর মেডেল এবং দেওয়ান তাছাড়া রাজা সংগৃহিত হাছন রাজার গানের পান্ডুলিপি।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মন্ত্রীদের কাছে দেওয়ান তালেবুর রাজার লেখা চিঠি, তার ব্যবহৃত ঘড়ি, কলম, আংটি, লাইসেন্স, দেওয়ান তওয়াবুর রাজা চৌধুরীর ব্যবহৃত ছুরি, দেওয়ান ছয়ফুর রাজা চৌধুরী সংগৃহীত হাঙ্গরের দাঁতও যাদুঘরে স্থান পেয়েছে। হাছন রাজার বংশধরদের চার্টও মিউজিয়াম সংগৃহীত আছে।

দেওয়ান হাছন রাজা বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জে ১২৬৯ সালের ৭ পৌষ (১৮৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে) জন্মগ্রহণ করেন। হাছন রাজার গান বাংলা লোক সঙ্গীতের অমূল্য সম্পদ। মূলত সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপভাষায় রচিত তার গান। তবু বাণী বৈচিত্রে ও সুর মাধুর্যে এ গান অঞ্চল নির্বিশেষে বাংলাভাষী সকল জনগোষ্ঠীর হৃদয় জয় করেছে। অর্জন করেছে বিপুল জনপ্রিয়তা। কেবল জনপ্রিয়তাই নয়, ভাবের গভীরতা ও উৎকর্ষের বিচারে হাছন রাজার গান কালজয়ী সাহিত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৩২৯ সালের ২১ অগ্রহায়ণ(৭ ডিসেম্বর,১৯২২) তিনি মৃত্যুবরণ করেন।





সিলেটী নাগরী লিপি

সিলেটের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বলতম দলিল নাগরী লিপি। এই রীতিতেই রচিত তৎকালীন উন্নত সাহিত্য। সিলেটের আঞ্চলিক বা কথ্য ভাষার রয়েছে বিজ্ঞান সম্মত লিপি মালা। গবেষক ও ভাষা বিজ্ঞানীদের কাছে এটি রীতিমতো বিস্ময়কর। নাগরীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-এটি সিলেট অঞ্চলের মুসলমানদের একান্ত নিজস্ব সম্পদ।

নাগরীর অক্ষর মাত্র ৩২টি। যুক্ত বর্ণ সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। মাত্র আড়াই দিনে শেখা যায়। তাই মহিলাদের মধ্যে নাগরীর প্রচার ও প্রসার ছিল বেশী। এখনো অনেক মহিলা নাগরী জানেন।

নাগরীতে রচিত পুঁথি পুস্তকের বিষয়বস্ত্ত প্রধানত নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলামী ইতিহাস, ঐতিহ্য, কাহিনী এবং রাগ, বাউল ও মরমী সঙ্গীত। এ পর্যন্ত ৮৮টি মুদ্রিত গ্রন্থসহ(নাগরী হরফে) ১৪০টি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। ‘সিলেটী নাগরী লিপি ভাষা ও সাহিত্য’ সম্পর্কে গবেষণা করে জনাব গোলাম কাদির ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।

নাগরী সাহিত্যে ছাদেক আলী সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি। তিনি ১৭৯৮ সালে কুলাউড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল গৌর কিশোর সেন। ১৮২৩ সালে তিনি মৌলভীবাজারের মুনসেফ ছিলেন।

নাগরী পুঁথি রচয়িতাদের মধ্যে এ পর্যন্ত মুন্সী ইরপান আলী,দৈখুরা মুন্সী, আব্দুল ওহাব চৌধুরী, আমান উল্যা, ওয়াজি উল্যা, শাহ হরমুজ আলী, হাজী ইয়াছিনসহ ৫৬ জনের পরিচিতি পাওয়া গেছে। গোলাম হুসনের লিখিত ‘তালিব হুসন'কে প্রথম গ্রন্থ রুপে ধরে নেওয়া হয়।

ড: সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় খৃষ্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীকে নাগরী লিপির প্রচলন কাল বলে মত প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে মোঘলদের দ্বারা তাড়িত হয়ে সিলেটে আগত আফগান পাঠানরা এর সৃষ্টি করেন। এ ব্যাপারে আরেকটি মত চালু রয়েছে। সেটি হল- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ সৃষ্ট সংস্কৃত বহুল বাংলার বিকল্প রুপে সিলেটীরা এই লিপি ও সাহিত্যের জন্ম দেন।

নাগরী লিপিতে সাহিত্য সৃষ্টির অনেক পর এর মুদ্রণ শুরু হয়। টাইপ ও ছাপা খানার অভাবে হাতে লিখেই নাগরীর প্রসার ঘটে। এ সময় সিলেট শহরের হাওয়াপাড়া নিবাসী মৌলভী আব্দুল করিম ইউরোপ সফর শেষে দেশে ফেরেন। নাগরী লিপির টাইপ তৈরি করে চালু করেন ছাপা খানা। বন্দর বাজারে স্থাপিত ঐ প্রেসের নাম ছিল ইসলামিয়া প্রেস। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেসটি বোমায় পুড়ে যায়। সিলেট শহরের নাইওরপুলে ছিল সারদা প্রিন্টিং পাবলিশিং। ১৯৪৭ পূর্ববর্তীকালে কলকাতা ও শিয়ালদহেও নাগরী লিপির প্রেস ছিল।

বৃহত্তর সিলেট, কাছাড়, করিমগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় নাগরী লিপি ও সাহিত্যের প্রচার ও সমাদর ছিল। বর্তমানে নাগরীর চর্চা কম হলেও তা একেবারে হারিয়ে যায়নি।



হাকালুকি হাওর

হাকালুকি হাওর সিলেটের অন্যতম বৃহৎ হাওর। বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সেটি বিসত্মৃত। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়াও মৎস্য সম্পদের এক বিশাল ক্ষেত্র। অতিথি পাখির অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র হাকালুকি হাওর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি সেখানে আসে।



মালনীছড়া চা বাগান

সিলেট তথা বাংলাদেশের প্রথম চা-বাগান মালনীছড়ার গোড়াপত্তন হয় ১৮৫৪ সালে। সিলেট শহরের অতি নিকটের এই চা-বাগান বৈষয়িক কোলাহলে তার শ্রী ইতোমধ্যে অনেকটা হারিয়েছে। তারপরও ভ্রমণের জন্য এক অভূতপূর্ব স্থান।



বঙ্গবীর ওসমানী শিশু পার্ক

সিলেট নগরীতে বিনোদনের জন্য উপযোগী কোন পার্ক ছিল না। তবে সিলেটের এই অপবাদ ঘুচিয়ে দিয়েছে সিলেটের ওসমানী শিশু পার্ক। সিলেট নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধোপা দিঘীর পাড়ে দেখার মত বিনোদনকেন্দ্র এই বঙ্গবীর ওসমানী শিশুপার্ক। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নামে ওসমানীরই শেষ ইচ্ছা অনুয়ায়ী ২০০০ সালে স্থাপিত হয় এটি। এই পার্ক স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। প্রায় ৮ একর আয়তনের এই পার্কে এখন দর্শনার্থীদের ভিড় দেখার মত। নানা ধরণের গেমস ছাড়াও এখানে শিশুরা চড়তে পারে ঘোড়া, ট্রেন, নৌকা, চড়কি। আর দেখতে পারে বন থেকে আনা স্নো চিতা, বনের বানর ও ছোট বড় সব অজগর সাপ। যখন নগরীর প্রাণকেন্দ্রের এই পার্কে দল বেঁধে শত-শত বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থী এখানে ভিড় করেন প্রতিদিন। এখানে প্রাণের মেলা বসে প্রতিদিন।



পর্যটন মোটেল সিলেট

সুবাস চন্দ্র নন্দি

ইউনিট ম্যানেজার



এয়ারপোর্ট রোড, বড়শোলা, সিলেট

টেলিফোন-০৮২১-৭১২৪২৬



কি ভাবে যাবেনঃ বাস- ঢাকা সিলেট প্রতিদিন বাস সার্ভিস ।

বিমান এবং ট্রেন



অবস্থানঃ সিলেটের আম্বরখানা হতে মাত্র ০৫ মিনিটের যাত্রা।

রুম ভাড়াঃ



টুইন বেড(এসি, টিভি, ইন্টারকম) ১৪০০/-+ ভ্যাট

টুইন বেড (নন এসি, ইন্টারকম) ৮০০/-+ ভ্যাট



সুবিধাঃ ৬০ আসন বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রীত রেস্টুরেন্ট

জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালন করার ব্যবস্থা।

১০০ আসন বিশিষ্ট কনফারেন্স হল

পর্যবেক্ষন টাওয়ার, এমিউজম্যান্টে পার্ক, আইস ক্রীম, এবং স্ন্যাকস এবর ব্যবস্থা রয়েছে।



শাহী ঈদগাহ

স্থানটি নানা কারণে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এখানেই হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান হয়েছে। ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্না গান্ধী থেকে শুরু করে কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো নেতাদের পাদস্পর্শে ধন্য স্থানটি। অতীতে সিলেটের বড় বড় সমাবেশের স্থানও ছিল এটি। আর প্রতি বছর ঈদ জামায়াতে লোক সমাগমের বিষয়টি তো বলাই বাহুল্য।

স্থানটি হচ্ছে- সিলেটের শাহী ঈদগাহ। দেশের প্রাচীনতম ঈদগাহ এটি। মনোমুগ্ধকর কারুকার্যময় এই ঈদগাহটি মোগল ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নির্মাণ করেন। এখানে এক সাথে প্রায় দেড় লাখ মুসল্লী ঈদের জামাত আদায় করতে পারেন। ঈদগাহর প্রাকৃতিক দৃশ্য খুবই মনোরম। নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় এর অবস্থান। তাই ঈদগাহটির এমন নামকরণ হয়েছে। ঈদগাহের উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে সুউচ্চ টিলার ওপর বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্ব দিকে হযরত শাহজালাল(র:) এর অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র:) এর মাজারের পাশের টিলার ওপর রয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস।

অনুপম কারুকার্যখচিত এই ঈদগাহের মূল ভূ-খন্ডে ২২টি সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠতে হয়। এরপরই ১৫টি গম্বুজ সজ্জিত ঈদগাহ। সীমানা প্রাচীরের চারদিকে রয়েছে-ছোট বড় ১০টি গেইট। ঈদগাহের সামনে অজুর জন্য বিশাল পুকুর অবস্থিত।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৭৮২ খ্রীষ্টাব্দে এখানে সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যূত্থান সংঘটিত হয়। ইংরেজদের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহীদ হন।

প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামাত অনুষ্টিত হয়। এখানে এক সাথে লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদ জামাত আদায় করতে পারেন।



বেত শিল্প

মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সিলেটের বেত শিল্প অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে যেখানে হাতে গোনা কয়েকটি বেতের আসবাপত্রের দোকান ছিল সেখানে এখন দোকান রয়েছে প্রায় শতাধিক। এ পেশার সাথে যুক্ত আছে সহস্রাধিক শ্রমিক। বর্তমানে বাংলাদেশের বেতের আসবাপত্রের চাহিদার সিংহভাগ যোগান দেয় সিলেটের বেত শিল্প । অভ্যন্তরিন চাহিদা পূরন করে বর্তমানে সিলেটের বেত সামগ্রী আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

প্রায় ২০ বছর পূর্বে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন(বিসিক) এর উদ্যোগে সিলেটে নগরীর ঘাসিটুলা এলাকায় একটি বেতশিল্প গড়ে তোলা হয়। কিছুদিন পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়।বর্তমানে অনেকেই ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এই শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখছে।

সিলেট এক সময় বেতের জন্য বিখ্যাত ছিল। সিলেটে ১৮৮৫ সালে প্রথম বেতের ফার্নিচার ম্যানুফেকচার হয়। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত সিলেটের বনাঞ্চলে প্রচুর বেত পাওয়া যেত। যদিও পরবর্তীতে সিলেটে অঞ্চলে বেতের উৎপাদন কমে আসতে থাকে। বর্তমানে উৎপাদিত বেতে চাহিদা পূরন না হওয়ায় বিদেশ থেকেও বেত আমদানি করা হচ্ছে।

সিলেটে বর্তমানে প্রায় ৫০ প্রকারের বেত জাতীয় পণ্য তৈরী হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বেতের তৈরী ম্যাগাজিন র‌্যাক, টেলিফোন চেয়ার, সোফা সেট, বেড সেট, স্যুজ রেক, ট্রলি, টেবিল, শেলফ, রিডিং টেবিল, রকিং চেয়ার, টেলিফোন টেবিল, ফোল্ডিং চেয়ার, আর্ম চেয়ার, রাউন্ড কফি টেবিল, কর্ণার সোফা এন্ড ইজি চেয়ার, ফুল ইজি চেয়ার, ডাইনিং সেট, টি ট্রলি, গার্ডেন চেয়ার, পেপার বাস্কেট, বুক শেলফ, ম্যাগাজিন বাস্কেট, ডাইনিং চেয়ার,বাঙ্গি টেবিল,কোর্ট হ্যাঙ্গার,মোড়া,রকিং চেয়ার, বেবী কট, বোতল র‌্যাক ও প্ল্যান্টার। এর বেশীর ভাগই ইংল্যান্ডে রপ্তানী করা হয়। সেই সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় এই বেত সামগ্রী।



posted from Bloggeroid