Wednesday, 1 June 2016

ইন্টারনেটে পড়াশোনার জগৎ

জাহাঙ্গীরনগর ইসলামের গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। ছোটবেলা থেকে তাঁর নানা বিষয়ে শেখার আগ্রহ। কলেজে পড়ার সময় একবার ভর্তি হয়েছিলেন ফটোগ্রাফি কোর্সে। নিয়মিত পড়াশোনা চাপে সে কোর্স আর বেশি দূর এগোয়নি। তখন মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফুরন্ত সময়ে নিশ্চয় আগ্রহের সবকিছু শিখে ফেলবেন! কিন্তু ক্লাস, পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনের চক্করে পড়ে সেসব যেন বেমালুম ভুলতেই বসেছিলেন। আর তখনই এক নতুন রাজ্যের খোঁজ পেলেন তিনি। বিশ্বখ্যাত এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বৃত্তিবিষয়ক তথ্য ঘাঁটতে গিয়ে তাঁর নজর পড়ে মেন্যুবারের ‘অনলাইন এডুকেশন’ বোতামটি। সেটি তাঁকে নিয়ে যায় ‘কোর্সেরা’ নামের নতুন রাজ্যে। যেখানে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে দেওয়া হয় বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করার সনদ। তারপর তাঁকে আর আটকায় কে! কয়েক মাস পেরোতেই প্রাচীন সভ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তন, একুশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি...নানা বিষয়ে বিনে পয়সায় কোর্স করার সুযোগ হলো তাঁর।
অনলাইনে পড়াশোনার এই গল্প শুধু ফারিবা ইসলামের একা নয়। হালের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণেরা জানার আগ্রহ থেকে পছন্দসই বিষয়ে অনলাইন-কোর্স করছেন। তেমনি একজন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ইউসুফ মুন্না। অনলাইনে কোর্স নিয়ে মুন্না বলেন, ‘আমি লিডারশিপ, পাবলিক স্পিকিং, এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু আমাদের পাঠ্যবইতে তো তো এসব নিয়ে তেমন কিছুই নেই। অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো শেখার চেষ্টা করছি।’

অনলাইন কোর্স কী ও কেন
সরল কথায়, দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের আধুনিক সংস্করণ হচ্ছে এই অনলাইন কোর্স। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়সহ পৃথিবীর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এর বাইরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিগতভাবেও অনলাইনে কোর্স করানো হয়। এই কোর্সগুলো মূলত দুইভাবে করানো হয়—অর্থের বিনিময়ে কিংবা নিখরচায়। তবে বিনা মূল্যে কোর্সের ক্ষেত্রেও অনেক সময় সনদ সংগ্রহ করতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়।
অনলাইনে কোর্স বিষয়ে ই-মেইলে কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ এমারত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘরে বসে নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে কোনো কোর্স করার এটি ভালো সুযোগ। আমি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যে ক্লাস যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শ্রেণিকক্ষে নিচ্ছি, সেই ক্লাসেই বিশ্বের অন্য কোনো দেশের শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে স্কাইপে। এ ধরনের কোর্সের বিস্তার দিন দিন আরও বাড়বে।’
কোর্সগুলো বিভিন্ন মেয়াদি হয়ে থাকে। তিন সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাসেরও হতে পারে।
আমাদের চাকরির বাজারে কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রে কোর্সগুলোর গুরুত্ব কেমন? জানতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইমুম হোসেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘অনলাইন কোর্স আসলে জানার পরিধি বাড়িয়ে দেয়। যে বিষয়গুলো সম্পর্কে সচরাচর জানার বা শেখার সুযোগ কম। তা এই কোর্সগুলোর মাধ্যমে খুবই সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে চাকরি বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে এই সনদের গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত খুব একটা তৈরি হয়নি। তবুও শেখা তো হলো, এ-ই বা কম কী।’
যেসব বিষয়ে কোর্স
ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান, কলা ও সংস্কৃতি, ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রকৌশল, ভাষা, আইন, গণিত, সাহিত্য, নৈতিকতা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, খাদ্য ও পুষ্টি, সংগীত, তথ্যপ্রযুক্তিসহ কত শত বিষয়ে যে কোর্স করা যায়, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। গত বছর প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা গেল, সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয় ৪ হাজার ২০০ কোর্স আহ্বান করেছে। আর এসব কোর্সে অংশ নিচ্ছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিক্ষার্থী।

যেভাবে খোঁজ পাবেন
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারলেই কোর্স সম্পর্কে জানা যাবে। এর বাইরে শুধু অনলাইন কোর্সবিষয়ক বিশেষায়িত বিভিন্ন ওয়েবসাইটও রয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আহ্বান করা কোর্স সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকেন। এর বাইরে বিশেষায়িত ওয়েবসাইটগুলোও বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স পরিচালনা করে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ওয়েবসাইট সম্পর্কে।
এডেক্স: বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইটি ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করে এডেক্স (www.edx.org)। শিক্ষার জগতে বিপ্লব আনতেই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তৈরি করেছেন এই ওয়েবসাইট। শুরুতে এমআইটির শিক্ষকেরা এমআইটিএক্স নামের প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইন কোর্স চালু করেন। সারা বিশ্বের প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন এই ওয়েবসাইটে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৭০০ বিষয়ের ওপর বিনা মূল্যে কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এখানে।
কোর্সেরা: বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর অনলাইন-পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হলো কোর্সেরা (www.coursera.org)। ইংরেজি, স্প্যানিশ, চায়নিজ, রুশ, জার্মানিসহ ১২ ভাষায় কোর্স করার সুযোগ রয়েছে এই ওয়েবসাইটে। যেখানে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার সায়েন্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতিসহ ২৮টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স করার সুযোগ পান। অনলাইন কোর্সের বিশেষায়িত ওয়েবসাইটটিতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার কোর্স করানো হচ্ছে!
শুধু এডেক্স বা কোর্সেরাই নয়, এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে। গুগলের কল্যাণে সহজেই সেসবের খোঁজ মিলবে।

posted from Bloggeroid


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: