জেসমিন রহমান (ছদ্মনাম) রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদেই কাজ করেন। দুই সন্তান আর স্বামী নিয়ে ছোট্ট সংসার। স্বামীও উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী। পেশা ও সামাজিক জীবনে সাফল্য পেলেও ব্যক্তিজীবনে ভালো নেই জেসমিন রহমান। উঠতে-বসতে স্বামীর কটু কথা শুনতে হয়। সম্মান করে কিংবা ভালোবেসে কথা বলা দূরে থাক, তাঁকে হেয় করাই যেন স্বামীর লক্ষ্য। জেসমিন বলেন, ‘শুধু ঘরে নয়, বাইরের মানুষের সামনেও খারাপ ব্যবহার করেন। কখনো ভাবেনও না এতে শুধু আমার নয়, পরিবারের সম্মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি ছেলেমেয়ের বন্ধুদের সামনেও অপমান করেন।’ স্বামীর এমন আচরণে প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট পেতেন। প্রতিবাদও কম করেননি। ‘কিন্তু তাঁর আচরণের কোনো পরিবর্তন নেই। এখন মেনে নিয়েছি। জানি না, একজন শিক্ষিত পুরুষ বউকে অপমান করে কী আনন্দ পায়!’
১৭ বছরের বিবাহিত জীবন রাহিমা আক্তারের (ছদ্মনাম)। বিয়ের বছর দুই পার হতেই সংসারে অশান্তির শুরু। কোনো কিছু মনঃপূত না হলেই বকাঝকা করেন ব্যবসায়ী স্বামী। খোঁটা না দিয়ে কোনো কথা বলেন না। গালিগালাজও করেন। রাহিমা বলেন, ‘বাজার করা থেকে রান্না করা, সন্তানদের পড়ালেখা থেকে আত্মীয় সামলানো সবই আমাকে করতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষা নেই।’ রাহিমার মনে হয়েছে, ‘স্বামী আমাকে স্ত্রী হিসেবে কোনো দিন সময় দেননি। পরিবারে আমার মতামতের কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু ছেলেমেয়ের কথা ভেবে নিজেকে সামলাই।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে কিছুদিন চাকরিও করেছিলেন রাহিমা। ‘চাকরিজীবী বউ ভালো হয় না’ বলে অভিযোগ ছিল। তাই সংসারের কথা ভেবে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। তবু থামেনি স্বামী-শ্বশুরের মানসিক নির্যাতন।
কেবল জেসমিন রহমান বা রাহিমা আক্তারের জীবনেই এমনটা ঘটেনি। দেশের বেশির ভাগ নারীই এভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গ্রামের তুলনায় শহরের নারীরা বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৫২ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন করেন। গ্রামে এই হার ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ শহরে ৬ শতাংশ নারী বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। জরিপটি ২০১১ সালে চালানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, নিজস্ব মূল্যবোধের কারণে শহরের নারীরা এখন জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করেছেন। নারীদের মধ্যে ‘অসহনীয় আচরণ’ সহ্য করার প্রবণতা কমছে। তাঁরা এখন প্রতিবাদ করে এমনকি আইনের আশ্রয়ও নিয়ে থাকেন। ফলে পুরুষেরাও নারীকে অবদমনের পথ, নিয়ন্ত্রণের কৌশল বদলে ফেলেছেন। তাঁরা শারীরিক নির্যাতনের বদলে বেছে নিয়েছেন মানসিক নির্যাতন। এতে তাঁরা নির্যাতনও করতে পারছেন, আবার প্রমাণও থাকছে না। ফলে শহরের নারীরা এখন বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী কোনো না কোনোভাবে বছরে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হন। এসবের মধ্যে আবার মানসিক নির্যাতনের হারই বেশি। জীবনসঙ্গীর হাতে মানসিক নির্যাতনের হার ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে যৌন বা শারীরিক নির্যাতনের হার ৬৭ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক নির্যাতন ৫৩ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপে গ্রামাঞ্চল-শহরাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়নি। জনসংখ্যা ও গৃহায়ণশুমারি-২০১১ অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার, যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮ লাখ নারী গ্রামে বাস করেন আর শহরে ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার।
নারীদের ওপর মানসিক নির্যাতন বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, ‘শহুরে মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ কমে গেছে। পাশের ফ্ল্যাটে থেকেও জানা যাচ্ছে না একে অপরকে। এতে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।’
সমাজ যেভাবে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, সেভাবে আমাদের মানসিকতা বদলাচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। বললেন, ‘আমরা মুখে আধুনিকতার কথা বললেও সনাতন জীবনবোধ পাল্টাইনি। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ধরন ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে শহরে নারীদের প্রতি মানসিক অত্যাচার বাড়ছে। তবে অনেক শারীরিক অত্যাচারের ঘটনাও ঘটছে, যেগুলো সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে প্রকাশ পায় না।’ যেসব নির্দেশক ধরে জরিপ চালানো হয় সেগুলো আরও স্পষ্ট করা দরকার বলেও মত দেন এই নারীনেত্রী।

১৭ বছরের বিবাহিত জীবন রাহিমা আক্তারের (ছদ্মনাম)। বিয়ের বছর দুই পার হতেই সংসারে অশান্তির শুরু। কোনো কিছু মনঃপূত না হলেই বকাঝকা করেন ব্যবসায়ী স্বামী। খোঁটা না দিয়ে কোনো কথা বলেন না। গালিগালাজও করেন। রাহিমা বলেন, ‘বাজার করা থেকে রান্না করা, সন্তানদের পড়ালেখা থেকে আত্মীয় সামলানো সবই আমাকে করতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষা নেই।’ রাহিমার মনে হয়েছে, ‘স্বামী আমাকে স্ত্রী হিসেবে কোনো দিন সময় দেননি। পরিবারে আমার মতামতের কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু ছেলেমেয়ের কথা ভেবে নিজেকে সামলাই।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে কিছুদিন চাকরিও করেছিলেন রাহিমা। ‘চাকরিজীবী বউ ভালো হয় না’ বলে অভিযোগ ছিল। তাই সংসারের কথা ভেবে চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন। তবু থামেনি স্বামী-শ্বশুরের মানসিক নির্যাতন।
কেবল জেসমিন রহমান বা রাহিমা আক্তারের জীবনেই এমনটা ঘটেনি। দেশের বেশির ভাগ নারীই এভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। গ্রামের তুলনায় শহরের নারীরা বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের প্রায় ৫২ শতাংশ পুরুষ স্ত্রীকে মানসিক নির্যাতন করেন। গ্রামে এই হার ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ শহরে ৬ শতাংশ নারী বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। জরিপটি ২০১১ সালে চালানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, নিজস্ব মূল্যবোধের কারণে শহরের নারীরা এখন জীবনকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করেছেন। নারীদের মধ্যে ‘অসহনীয় আচরণ’ সহ্য করার প্রবণতা কমছে। তাঁরা এখন প্রতিবাদ করে এমনকি আইনের আশ্রয়ও নিয়ে থাকেন। ফলে পুরুষেরাও নারীকে অবদমনের পথ, নিয়ন্ত্রণের কৌশল বদলে ফেলেছেন। তাঁরা শারীরিক নির্যাতনের বদলে বেছে নিয়েছেন মানসিক নির্যাতন। এতে তাঁরা নির্যাতনও করতে পারছেন, আবার প্রমাণও থাকছে না। ফলে শহরের নারীরা এখন বেশি মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১১ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৮৭ শতাংশ বিবাহিত নারী কোনো না কোনোভাবে বছরে একবার হলেও সহিংসতার শিকার হন। এসবের মধ্যে আবার মানসিক নির্যাতনের হারই বেশি। জীবনসঙ্গীর হাতে মানসিক নির্যাতনের হার ৮২ শতাংশ। অন্যদিকে যৌন বা শারীরিক নির্যাতনের হার ৬৭ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক নির্যাতন ৫৩ শতাংশ। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপে গ্রামাঞ্চল-শহরাঞ্চলের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়নি। জনসংখ্যা ও গৃহায়ণশুমারি-২০১১ অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার, যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮ লাখ নারী গ্রামে বাস করেন আর শহরে ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার।
নারীদের ওপর মানসিক নির্যাতন বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, ‘শহুরে মানুষের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ কমে গেছে। পাশের ফ্ল্যাটে থেকেও জানা যাচ্ছে না একে অপরকে। এতে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে।’
সমাজ যেভাবে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, সেভাবে আমাদের মানসিকতা বদলাচ্ছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। বললেন, ‘আমরা মুখে আধুনিকতার কথা বললেও সনাতন জীবনবোধ পাল্টাইনি। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ধরন ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে শহরে নারীদের প্রতি মানসিক অত্যাচার বাড়ছে। তবে অনেক শারীরিক অত্যাচারের ঘটনাও ঘটছে, যেগুলো সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে প্রকাশ পায় না।’ যেসব নির্দেশক ধরে জরিপ চালানো হয় সেগুলো আরও স্পষ্ট করা দরকার বলেও মত দেন এই নারীনেত্রী।

posted from Bloggeroid
0 coment rios:
Post a Comment