পবিত্র মাহে রমযান : প্রস্তুতি ও কার্যপরিকল্পনা
শায়েখ মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ : ভূমিকা : রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহান বার্তা নিয়ে প্রতি বছর ঘুরে আসে মাহে রমযান। এ মাস আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে রোজা পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন ও সকল প্রকার পাপ-পঙ্কিলতা ও পশুত্বের প্রবৃত্তি অবদমন করার এক মোক্ষম হাতিয়ার। এমনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি ও কার্যতালিকা তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনেক।
রমযানের প্রস্তুতি ও কার্যতালিকা : এত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস একবার পাওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমযানের রোজা পালনের সুযোগ পেল অথচ সে তার জীবনের সকল গোনাহ মাফ করাতে পারল না, তার চেয়ে হতভাগা কেউ নেই।’ এ মাস আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের মাস। এই নিয়ামতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য দরকার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও কার্যতালিকা। রমযান মাস শুরুর আগেই এই পরিকল্পনা ও কার্যতালিকা তৈরি করতে হবে। মহানবী (সাঃ) দুই মাস আগে থেকে এ মাস উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করতেন, যা মহানবী (সাঃ)-এর একটি দোয়ার মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিন। এই প্রস্তুতিপর্ব ও কার্যতালিকা নিয়েই আজকের মূল আলোচনা।
১. মানসিক পূর্ণ প্রস্তুতি : মানসিকভাবে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে যে, এ মাসের রোজা পালন করা যেহেতু ফরজ তাই তা ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘কাজের ভালো ফলাফল নির্ভর করে তার নিয়াতের ওপর।’ মানসিকভাবে দুর্বল সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে বিভিন্ন বাহানা পেশ করে রোজা পালন করা থেকে বিরত থাকে। যেমনÑ লম্বা দিন, গরমকাল, অনেক কায়িক পরিশ্রম করতে হয়, পেটে গ্যাস হয়ে যায় ইত্যাদি। তখনই এসব জিনিসের চিন্তা মানুষের মনে আসবে না, যখন সে শক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিবে, এটা ফরজ রোজা, আর তা পালন করতেই হবে।
২. দোয়া করা : রজব মাসের শুরু থেকেই মহানবী (সাঃ) এই দোয়া পড়তেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিন। এই দোয়াটি প্রতিদিন পড়লে রোজা পালনের পক্ষে মানসিক অবস্থা আরো শক্তিশালী হয়। তাই প্রতিদিন প্রতি নামাযের পর এই দোয়াটি পড়া দরকার।
৩. নফল রোজা রাখা : মহানবী (সাঃ) শাবান মাসে প্রচুর রোজা রাখতেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী (সাঃ) শাবান মাস অপেক্ষা বেশি আর কোনো মাসে রোজা রাখতেন না। কারণ তিনি অল্প কয়দিন ব্যতীত পুরো মাসই রোজা রাখতেন। বুখারী মুসলিম। মহানবী (সাঃ) বলেন, তবে রমযানের রোজার সাথে মিশে যাবে হয়তো এমন কারণেই এক/দুই দিন আগে থেকে রোজা না রাখে। তবে যে ব্যক্তির এ দিনগুলোতে রোজা রাখার অভ্যাস হয়ে গেছে সে ঐ দিনগুলোর রোজা রাখতে পারবে। বুখারী মুসলিম।
৪. শাবান চাঁদের হিসাব রাখা : মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা রমযানের জন্য শাবান মাসের গণনা করো।’ রাসূল (সাঃ) শানাব মাসের প্রতি এমন লক্ষ্য রাখতেন যে, অন্য কোনো মাসের প্রতি তিনি তেমন লক্ষ্য রাখতেন না।
৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত জরুরি। মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ।’ সুতরাং রমযান আসার আগেই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পালন করতে হবে। যার মাধ্যমে নিম্নেবর্ণিত বিষয়গুলোতে লক্ষ্য করা যেতে পারেÑ (১) বাসার অভ্যন্তরীণ সব কিছু যেমন জামা-কাপড়, বিছানাপত্র, আসবাবপত্র পরিষ্কার করা ও সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা। পানির ট্যাঙ্কি পরিষ্কার করা ও প্রয়োজনে বাসা রঙ করা যেতে পারে। (২) স্থানীয় সরকারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা। রাস্তায় অবস্থিত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা দোকানপাট ইত্যাদি উচ্ছেদ করা। যাতায়াতে অনুপযোগী রাস্তাসমূহ মেরামত করার মাধ্যমে যাতায়াত সহজতর করা। (৩) মসজিদ-মক্তব, স্কুল-মাদরাসা, অফিস-আদালত ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা। (৪) খাল, নালা-নরদমা, ড্রেন-সোয়ারেজ লাইন ইত্যাদি পরিষ্কার করা, যাতে বৃষ্টির পানি আবদ্ধ হলে জলাশয়ের অবস্থা তেরি না হয়। (৫) গ্রাম এলাকায় বর্ষা হলে মসজিদে যাতায়াতের জন নৌকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা।
৬. জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিতরণ : ইলম অর্জন করার মোক্ষম সুযোগ পবিত্র রমযান মাস। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, জমাট বাঁধা রক্তের দলা থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।’ সূরা আলাক ১-২। মহান আল্লাহ মহানবী (সাঃ)-এর ওপর এ মাসেই কুরআন নাযিল করেন এবং তাঁকে কুরআনের জ্ঞানার্জন ও তা সকলের কাছে বিতরণের তাগিদ প্রদান করেন। পবিত্র কুরআন নাযিলের ফলে মহানবী (সাঃ)-এর জ্ঞানার্জন ও বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা এ মাসেই শুরু হয়। এভাবে প্রতি রমযান মাসেই জিব্রাইল (আঃ) মহানবী (সাঃ)-এর কাছে আসতেন এবং তাঁকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিব্রাইল (আঃ) তাঁর সাথে রমযানের প্রতি রাতে দেখা করতেন এবং তাঁকে কুরআন শেখাতেন। বুখারী-মুসলিম। রমযান মাসকে জ্ঞানার্জন ও বিতরণের মওসুম হিসেবে গ্রহণ করে যেসব কাজ করা যেতে পারে তা নিম্নরূপÑ
ক. কুরআন-হাদীস শিক্ষা ও শেখানোর পরিকল্পনা : মহানবী (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে নিজে কুরআন শিখে ও অন্যকে শিক্ষা দান করে।’ তাই আগত রমযান মাসে কুরআনের কোন কোন সূরা বা অংশের তাফসির পড়া হবে তা রমযান শুরুর আগেই ঠিক করতে হবে এবং কাকে কাকে, কি পরিমাণের কুরআন-হাদীস শেখানো যায় তার তালিকা করা। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারেÑ (১) প্রথম থেকে ১০টি বড় বড় সূরার তাফসির পড়া অথবা (২) মাক্কী সূরাসমূহের তাফসির পড়া অথবা (৩) মাদানী সূরাসমূহের তাফসির পড়া অথবা (৪) পুরো কুরআন শরীফ একবার অর্থসহ পড়া। এক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত তাফসির গ্রন্থসমূহ সংগ্রহ করা যেতে পারে : (১) তাফসিরে মারেুল কুরআন, (২) তাফসিরে তাফহীমুল কুরআন, (৩) তাফসিরে ফি-জিলালীল কুরআন, (৪) তাফসিরে বায়ানুল কুরআন, (৫) তাফসিরে ইবনে কাসির ইত্যাদি। অনুবাদের জন্য সংগ্রহ করা যেত পারে তরজমায়ে কুরআন মাজিদ।
হাদীসের যে কোনো একটি গ্রন্থ সংগ্রহ করে পড়া যেতে পারে। (ক) এন্তেখাবে হাদীস, (খ) যাদে রাহ, (গ) রিয়াদুস সালেহীন, (ঘ) হাদীস শরীফ ইত্যাদি। এ সব হাদীসের গ্রন্থসমূহে নিত্যপ্রয়োজনীয় হাদীসসমূহ সংকলন করা হয়েছে। সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থসমূহে অনেক বড়। যাদের দ্বারা সম্ভব সিহাহ সিত্তাহ সংগ্রহ করে পড়লে আরো ভালো হয়।
(খ) বিষয়ভিত্তিক ইসলামী বই পড়া : ইসলামকে সঠিকভাবে জানার জন্য এখন পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। ঈমান, ইসলাম, নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, দাওয়াত-তাবলীগ, ইকামতে দ্বীন ইত্যাদি বিষয়সমূহের মধ্যে ২/৩টি বিষয় নির্ধারণ করে সেগুলোর ওপর বিভিন্ন লেখকের বইসমূহ সংগ্রহ করা এবং এগুলোর তুলনামূলক অধ্যয়ন করা। এভাবে প্রতি বছর রমযান পালন করতে পারলে ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সম্ভব।
(গ) মাসয়ালা মাসায়েল : পবিত্রতা, নামায, রোজা, যাকাত, সেহরী, ইফতার, তারাবীহ, ফিতরা, ঈদুল ফিতর ইত্যাদি বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা মাসয়ালা মাসায়েলগুলো রমযান শুরুর আগেই জানার ব্যবস্থা করা।
(ঘ) বিষয়ভিত্তিক কুরআন-হাদীস মুখস্ত করা : কুরআন নাযিলের এই রমযান মাসে কুরআন-হাদীসের মুখস্তকরণের জন্য বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়া যেতে পারে। ইসলামের মৌলিক কিছু বিষয় নির্ধারণ করে প্রতিদিন এক/দুটি আয়াত ও হাদীস মুখস্ত করা যায়। এক্ষেত্রে বিষয়গুলো হতে পারে যেমনÑ ইসলাম, ঈমান, তাওহীদ, রেসালত, আখেরাত, দাওয়াত-তাবলীগ, শিক্ষা-দীক্ষা, ইকামতে দ্বীন, তাকওয়াহ, ইহসান, নামায, রোজা, যাকাত, হজ্জ, জান্নাত, জাহান্নাম এবং কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও সূরাসমূহ যেমনÑ আয়াতুল কুরসী, সূরা বাকারার শেষ রুকু, সূরা ফুরকানের শেষ রুকু, সূরা ফুসসিলাতের ২৯ থেকে ৩৫ নং আয়াত, সূরা কাহাফের শেষ চার আয়াত, সূরা বনি ইসরাইলের ৭৭ থেকে ৮৬ আয়াত, সূরা ইয়াছিন, সূরা আর রহমান, সূরা জুমা ইত্যাদি।
শিক্ষার জন্য বয়সের কমবেশির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো বয়সে শিক্ষার্জন করা যায়। রাসূল (সাঃ)-এর ওপর যখন কুরআন নাযিল হয়, তখন আবুবকর (রাঃ)-এর বয়স ছিল ৪১/৪২ বছর। তখন থেকে তিনি কুরআন মুখস্ত করা শুরু করেন এবং কুরআনের হাফেজ হয়ে যান। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর হাফেজ হওয়ার পরিকল্পনা না থাকলেও অন্তত ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের ওপর ৪/৫টি করে আয়াত-হাদীস মুখস্ত করা মোটেও কঠিন বিষয় নয়।
৭. দাওয়াতী কার্যক্রম : এই পবিত্র মাসে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামের দাওয়াতের কার্যক্রম সর্বপ্রথম রমযান মাসেই শুরু হয়েছিল। তাই রমযান মাসই দাওয়াতের সর্বোত্তম সময়। এক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতমÑ
এক. ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন : বিভিন্ন প্রকার ও প্রকৃতির ইফতার মাহফিল এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা। যেমনÑ (১) নিজের বাসায় আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা, (২) আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজনের ব্যাপারে উৎসাহিত করা, (৩) এলাকার যুবক ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা, (৪) মসজিদগুলোতে প্রতিদিন ইফতার ও এশার নামাযের আগে আলোচনার আয়োজন করা এবং (৫) পারিবারিকভাবে প্রতিদিন সবাইকে নিয়ে আলোচনার আয়োজন করা ইত্যাদি।
দুই. কুরআনের তাফসির, হাদীস ও ইসলামী বই বিতরণ : বই বিতরণ করার মাধ্যমে ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তাÑ (১) কুরআনের তাফসির, হাদীস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ইসলামী বইসমূহের তালিকা তৈরি করে রমযানের শুরুতেই তা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা। অনেক প্রকাশনা সংস্থা তাদের প্রকাশনার মূল্যের উপর বাট্টা দিয়ে থাকে। এ সুযোগও গ্রহণ করা যেতে পারে। (২) নিজের আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সামাজিক প্রতিষ্ঠিত লোকদের তালিকা তৈরি করা। কোন বছর কাকে কি কি ইসলামী বই বিতরণ করা হবে তার একটি তালিকা তৈরি করা। প্রতি বছর রমযানের প্রারম্ভেই এই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা। (৩) ঈদ কার্ডের বিপরীতে কুরআনের তাফসির, হাদীস ও ইসলামী বই পরিচিত লোকদের মাঝে উপহার দেয়া। (৪) আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত লোকদের মাঝে পত্র লেখার মাধ্যমেও দাওয়াতের কাজ করা যেতে পারে। (৫) রমযানসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে। (৬) দেয়ালিকা, হ্যান্ডবিল, লিফলেট, পোস্টারিং দেয়াল রাইটিং ইত্যাদি করা। (৭) প্রতিটি মসজিদ, মাদরাসা, স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রমযান উপলক্ষে ক্রোড়পত্র, ম্যাগাজিন ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারে।
৮. দান ও সাদকাহ প্রদান : রমযান মাস দান ও সাদকাহ করার সর্বোত্তম মাস। মহানবী (সাঃ) রমযান মাসে প্রচুর পরিমাণে দান করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (সাঃ) ছিলেন লোকদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল। বিশেষ করে রমযান মাসে তাঁর দানশীলতা আরো বেশি বেড়ে যেত, যখন জিব্রাইল (আঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রাইল (আঃ) তাঁর সাথে রমযানের প্রতি রাতে দেখা করতেন এবং তাঁকে কুরআন শেখাতেন। জিব্রাইল (আঃ) যখন রাসূল (সাঃ)-এর সাথে দেখা করতেন, তখন তাঁর দানশীলতা বৃষ্টি আনয়নকারী বাতাসের চাইতেও বেশি হয়ে উঠত। বুখারী-মুসলিম। তাই রমযান মাসকে দান ও সাদকাহ প্রদানের মাস হিসেবে উদযাপন করার জন্য নিম্নবর্ণিত কার্যক্রমগুলো গ্রহণ করা যেতে পারেÑ (১) মসজিদ ও গরীবদের ইতফার দেয়া। প্রতিদিনে ন্যূনতম একজনকে ইফতার করার জন্য পরিকল্পনা করা। (২) রোজা শুরুর আগেই নিজের গরীব আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে নিজের সামর্থ্য অনুসারে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করা। এখানে থাকতে পারে চাল, তেল, চিনি, ময়দা, খেজুর, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি। ১০/১৫টি পরিবারের মধ্যে তা বিতরণ করা যেতে পারে। (৩) গরীব আত্মীয়, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে জামা-কাপড় বিতরণ করা। (৪) যাকাতের হিসাব সম্পাদন করে তার নির্ধারিত খাতে বিতরণ করা।
৯. আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ : এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারেÑ (১) এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে রমযান আসার আগেই আর্থিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। রমযান এলেই আমাদের দেশে এক শ্রেণীর কালোবাজারিরা দ্রব্যমূল্যের দর বাড়িয়ে দেয়। ফলে মানুষ সুন্দরভাবে রমযানের রোজা পালন করতে পারে না। তাই দ্রব্যমূল্য বাড়ার আগেই পুরো মাসের প্রয়োজনীয় সব খরচাদি করে নেয়া দরকার। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যকে রমযানকেন্দ্রিক করা দরকার। তথা রমযানে যাতে পণ্য-দ্রব্যের মূল্য বেড়ে না যায় সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়Ñ প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কথা। তারা রমযান উপলক্ষে ডিসকাউন্ট বা বাট্টা দিয়ে থাকে। এভাবে প্রতিটি পণ্য উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারীগণই তাদের পণ্যের মূল্যের ওপর বাট্টা দিতে পারে। (২) নতুন জামা-কাপড় ক্রয় : একইভাবে রমযানে জামা-কাপড়ের দামও বেড়ে যায়। তাই সামর্থ্য মোতাবেক কেনাকাটা রমযানের শুরুতেই শেষ করা দরকার। (৩) যাকাত প্রদান : রমযানকে কেন্দ্র করে যাকাত প্রদানের ব্যবস্থা করা দরকার। রমযানের ১ তারিখকে যাকাত বছরের ১ম দিন ধার্য করে যাকাত হিসাব করা এবং রমযানের প্রারম্ভেই তা সঠিকভাবে বণ্টন করা দরকার। যাকাতের নামে শুধু শাড়ি কাপড় না দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজে যাকাতের অর্থ পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা দরকার। প্রথমে যাকাত নেয়ার উপযোগী আত্মীয়, প্রতিবেশী ও গরীবদের একটি তালিকা তৈরি করা এবং আত্মনির্ভর করার জন্য কাকে কোন বছর কত টাকা দিয়ে কোন প্রকারের ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যায় তা ঠিক করতে হবে। এদের এভাবে দান করতে হবে যাতে পরবর্তী বছর সে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে এবং যাকাত নেয়ার আর দরকার না হয়।
সমাপনী কথা : পরিশেষে বলা যায় যে, বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মাস পবিত্র রমযান। এ মাস পাওয়া একটি সৌভাগ্যের বিষয়। এ মাসকে সঠিকভাবে উদযাপনের মধ্যে রয়েছে দুনিয়া এবং পরকালের শান্তি ও কল্যাণ। তাই আসুন, সবাই মিলে রমযানকে উত্তমভাবে পালনের জন্য পূর্বপরিকল্পনা গ্রহণ করি এবং সে মোতাবেক সবাই পালন করি।
লেখক : গবেষক ও ব্যাংকার
Friday, 27 May 2016
Author: bdlove
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 coment rios:
Post a Comment