দ্রব্যমূল্য কেন বাড়ে এ প্রশ্নের জবাবে মৌলিকভাবে দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়। ১. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ২. মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত লালসা। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কিছু কারণ রয়েছে। যেমন- আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, শুল্ক বৃদ্ধি করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ দ্রব্যমূল্য কেন বাড়ে এ প্রশ্নের জবাবে মৌলিকভাবে দুইটি কারণ উল্লেখ করা হয়। ১. ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। ২. মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত লালসা। এছাড়াও প্রাসঙ্গিক কিছু কারণ রয়েছে। যেমন- আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, শুল্ক বৃদ্ধি করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির ক্ষেত্রে সরকারের অমনোযোগিতা ও ব্যর্থতা, শিল্প মালিক, উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি ইত্যাদি কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। তবে এসব কারণ সরকার আন্তরিক হলে দমন করা সম্ভব। এক শ্রেণীর অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ী করে থাকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ ভোক্তারা। তবে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় ইসলাম দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এমনসব কালজয়ী, কল্যাণধর্মী, সুচিন্তিত নীতিমালা ও সুদূরপ্রসারী বাজার পরিকল্পনা দিয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যস্ফীতি রোধ এবং সর্বোপরি বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব। 'ইহতেকার', 'বায়উল হাজিরি লিল বাদি', 'বায়উন কাবলাল কাবজ', 'বায়উ মা-লাইসা ইনদাল ইনসান', 'বায়উল কালি বিল কালি', 'তালাক্কীয়ে জালাব' ইত্যাদি বিধানগুলো মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য। সবার আগে আলোচনা আসে ইহতেকার বা স্টকের। পর্যাপ্ত পণ্যদ্রব্য থাকা সত্ত্বেও অধিক মুনাফার আশায় কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের কষ্ট দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণরূপে হারাম। এ ধরনের লোকের ইবাদত কবুল হয় না বলে হাদিসে স্পষ্ট বর্ণনা এসেছে। স্টককৃত দ্রব্য সরকার নিজের জিম্মায় নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার এখতিয়ার সংরক্ষণ করে। হজরত মা'মার ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ফাজালা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, 'পাপাচারী ছাড়া অন্য কেউ মজুদদারি করে না।' (তিরমিজি)। অন্য হাদিসে আছে, 'যে ব্যক্তি ৪০ রাত পর্যন্ত খাদ্যদ্রব্য মজুদ রাখে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকে না।' 'বায়উন কাবলাল কাবজ' (পণ্য হস্তগত করার আগে পুনরায় বিক্রি), 'বায়উ মা-লাইসা ইনদাল ইনসান' (মালিকানা হাসিলের আগেই বিক্রি), 'বায়উল কালি বিল কালি' (নামে মাত্র বিক্রি) ইত্যাদি বেচাকেনাগুলো ইসলাম হারাম ও নিষিদ্ধ করে মূলত মধ্যস্বত্বভোগকে নিরুৎসাহিত করেছে। কারণ অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণেই পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। ইসলাম এ ধরনের লালসার কঠোর বিরোধী। এ প্রসঙ্গে হাদিসে রয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) স্বল্পমূল্যে কেনার জন্য বহিরাগত বিক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছেন। (তিরমিজি)। 'বায়উল হাজিরি লিল বাদি' ও 'বায়উন কাবলাল কাবজ'কেও নিষিদ্ধ করেছে। এ দুইটি বেচাকেনার মূল কথা হলো, পণ্যের মালিক বা তেজারতি কাফেলা শহরে পৌঁছার আগেই তাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার লোভে পণ্য কেনা এবং তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মূল বাজারে উঠতে বাধা প্রদান বা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের মালামাল কৌশলে বা জবরদস্তিমূলক খরিদ করে পাইকারি বাজারে একক আধিপত্য বিস্তার করা। এ ধরনের বেচাকেনায় সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তাদের স্বার্থ বিনষ্ট হয় এবং দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। সাধারণত গ্রামবাসী অনেক খাদ্যের উৎপাদনকারী। গ্রামবাসী সরাসরি শহরে এসে সেসব খাদ্য বিক্রি করলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং শহরবাসীকে উচ্চমূল্য দিতে হয় না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে নিয়ে নিজেরা দালালি করে বাজারদর বাড়িয়ে ফেলে। তাই ইসলাম এ দুই বেচাকেনাকে নিষিদ্ধ করেছে। তাবরানি শরিফে বর্ণিত রয়েছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে আগুনের হাড়ে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।' (তাবরানি, ৮/২১০)। অন্য একটি হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, 'কোনো শহরবাসী কোনো গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, যেন আল্লাহ তায়ালা তাদের একের দ্বারা অন্যের রিজিকের ব্যবস্থা করেন।' (তিরমিজি)। বর্তমানে এ ধরনের অভিযোগ ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক স্বল্পমূল্যে খরিদ করে পাইকারি বাজারে তাদের ইচ্ছানুযায়ী উচ্চমূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক সুদখোর লোক দাদন ব্যবসার মাধ্যমে কৃষকদের অগ্রিম টাকা দিয়ে আগে থেকেই তাদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য খরিদ করে নিয়ে থাকে অথচ ইসলামের এ বিধানগুলো যদি লঙ্ঘিত না হতো তাহলে তৃণমূলের উৎপাদনকারীরা নির্বিঘ্নে পাইকারি বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেত। এতে একদিকে দ্রব্যমূল্য সাধারণ আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে থাকত এবং কৃষকরাও ন্যায্যমূল্য পেত। ইসলামী শরিয়তের বিধান হচ্ছে, সাধারণত সরকার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে না। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, 'রাসুল (সা.) এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেল। লোকেরা বলল, "ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসুল (সা.) বললেন, মূলত আল্লাহ তায়ালাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সঙ্কীর্ণকর্তা, প্রশস্তকর্তা ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারো যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে।" (তিরমিজি, ১/২৪৫, আবু দাউদ)। এ হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতেই ফকিহরা বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সরকার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে না; তবে ব্যবসায়ীরা যদি অতিরিক্ত মূল্য নেয় এবং এতে যদি জনসাধারণের ভোগান্তির শিকার হতে হয়, তাহলে সংশিষ্ট বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। সর্বসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে সরকারের এমন পদক্ষেপ কল্যাণকর বলেই বিবেচিত হবে। (হিদায়া, আলমগীরি)। দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের নীতিমালা বর্ণনা করতে গিয়ে 'বাহরুর রায়েক' গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, 'সরকার যখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে চাইবে, তখন সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাজারের গণ্যমান্য লোকদের একত্রিত করবে। ক্রেতাসাধারণকে সরকার উপস্থিত করবে। বিক্রেতারা কী দামে বিক্রি করছে এবং ক্রেতারা কী দামে কিনছে, তা জিজ্ঞেস করে সত্যাসত্য যাচাই করবে। উৎপাদক, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের যাতে ক্ষতি না হয়, আবার ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার সীমাও যেন ছাড়িয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রেখে মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি তাকি উছমানী এ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, ফকিহরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়ীরা যেন যোগসাজশ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি তারা পরস্পর যোগসাজশে মূল্যবৃদ্ধি করে, তাহলে মুসলিম সরকার বাজারে হস্তক্ষেপ করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে পারবে, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। (তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম, ১/৩১২)। লিখেছেন : মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব সৌজন্যে : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ
Saturday, 28 May 2016
Author: bdlove
Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.
0 coment rios:
Post a Comment